রাত ১০:২৯ | বুধবার | ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ১লা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

কানাডা-মেক্সিকো-চীনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

 

 

 

শুল্ক আরোপের পর এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি কানাডা, চীন এবং মেক্সিকোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন। একদিন আগেই কানাডা থেকে আসা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ এবং দেশটির জ্বালানি পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। একই সময়ে মেক্সিকো থেকে আসা পণ্যে ২৫ শতাংশ এবং চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

আগামী মঙ্গলবার থেকেই এই শুল্ক কার্যকর হবে। ট্রাম্পের এমন নির্দেশের কারণে নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর ফলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে এবং মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা সব ধরনের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে পৃথক দুটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। পাশাপাশি চীন যতক্ষণ না ‘ফেন্টানিল’ মাদকের পাচার বন্ধ করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে আরেকটি নির্বাহী আদেশে সই করেন তিনি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র তিন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মার্কিন পণ্যেও একই হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ওই ঘোষণার পর মেক্সিকোও জানায় যে, তারাও একই ধরনের পদক্ষেপ নেবে।

সব মেক্সিকান পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছেন তার জবাবে শুল্কসহ পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম।

সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বলা হয়েছে, মেক্সিকোর স্বার্থ সংরক্ষণে ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ পদক্ষেপসহ প্লান বি বাস্তবায়নের জন্য অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইল ইন্ডাস্ট্রি লিডারস এসোসিয়েশন বলছে, দেশগুলোকে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে কাজ করা উচিত।

তিনি বলেন, আমরা বুঝতে পারছি যে প্রেসিডেন্ট একটি সমঝোতার জন্য কাজ করছেন। চার দেশের নেতাদের ৪ ফেব্রুয়ারির আগেই একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে কাজ করা উচিত। কারণ ব্যাপক ভিত্তিক শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

চীনের দিক থেকেও একই ধরনের ঘোষণা এসেছে। চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পদক্ষেপে চীন ভীষণ অসন্তুষ্ট। তারা দৃঢ়ভাবে এই পদক্ষেপের বিরোধী। এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মনীতির গুরুতর লঙ্ঘন।

কানাডা এবং মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের বড় বাণিজ্য সহযোগী। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্য ও সেবার ৭৫ শতাংশই আসে কানাডা থেকে। ফলে ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক আরোপের কারণে দেশটির অর্থনীতি মারাত্মক ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে কানাডা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির প্রায় এক চতুর্থাংশই ছিল অপরিশোধিত তেলের আমদানি যা আর্থিক মূলে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার।

ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের কারণে মার্কিন কোম্পানি যারা বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি কোনো মার্কিন গাড়ি প্রস্তুতকারক মেক্সিকো থেকে একটি যন্ত্রাংশ আমদানি করে, তবে এটি দেশে আসার পরে তাকে শুল্ক দিতে হবে। এভাবে সবক্ষেত্রেই অতিরিক্ত শুল্কের প্রভাব পড়বে।

ওভাল অফিসে বক্তৃতাকালে ট্রাম্প গণমাধ্যমকে বলেছেন যে, তার এমন সিদ্ধান্তের বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সীমান্ত দিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অভিবাসী ও ফেন্টানিল প্রবেশ করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। পাশাপাশি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিও রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্যই আমি এই শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার মতে, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের বিষয়টি মার্কিন অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হবে।

ট্রাম্প জানান, তিনি চীনের ওপরও নতুন শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা করছেন, যা আগে ১০ শতাংশ হারের কথা বলা হলেও আরও বাড়তে পারে। তিনি অভিযোগ করেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল সরবরাহ করছে, যার ফলে হাজার হাজার মার্কিন নাগরিক মারা যাচ্ছে। এর আগে ২০১৮ সাল থেকে চীনের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল, যার একটি বড় কারণ ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের ধারাবাহিক শুল্ক বৃদ্ধির নীতি।

ট্রাম্পের এমন নির্দেশের কারণে নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর ফলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে এবং মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এমনকি তা মার্কিন কর্মী-শ্রমিকদের ও ক্ষতি করবে। ট্রাম্পের শুল্কের জন্য খোদ মার্কিন ভোক্তাদেরই মাশুল গুনতে হবে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন:তিন দেশের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু?যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে মেক্সিকো-চীনএবার যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করলো কানাডা।

এদিকে মেক্সিকো, কানাডা এবং চীন পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার পরই তিন দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহের কথা প্রকাশ করলেন ট্রাম্প। তবে কবে, কখন কোন নেতার সঙ্গে তিনি কথা বলবেন সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়।

 

 

টি আই/ এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *