নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ আগস্ট ২০২৪
বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার সেনা তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির নতুন সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সমাবেশ থেকে তিনি এই দাবি জানান।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ অন্তবর্তীকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে গতকাল শপথ নিয়েছেন লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর… তার নেতৃত্বে একটা ইনকোয়ারি হয়েছিল বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকান্ডের ঘটনা নিয়ে। তিনি সঠিকভাবে কারণ এবং সমাধান বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে নাই।”
‘‘আমরা চাই, তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত যে সত্য অনুসন্ধান রিপোর্ট তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক।”
তিনি বলেন, ‘‘ বিডিআর এ মেধাবী চৌকশ সেনা অফিসারদের পোস্টিং দেয়া হয়েছিলো। এদেরকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের কারণে তাদেরকে নির্মভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দেখছি এই হত্যাকান্ডের যে বিচার হচ্ছে দীর্ঘসূত্রিতা, ভেরি স্লো। এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত এর বিচার শেষ হবে না।”
‘‘ অতি দ্রুত প্রয়োজন লাগলে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে যাদের যাদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে প্রত্যেককে ঝুলিয়ে দেন।তাহলে নিহতদের আত্মা শান্তি পাবে।”
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর(বাংলাদেশ রাইফেলস) এর সদর দফতর পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এর মধ্যে তকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদকেও হত্যা করা হয়েছিলো।
এই হত্যাকান্ডের তদন্তে সেনা বাহিনী থেকে লে.জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জমাও দিয়েছিলেন।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার পর সে বাহিনী পূনর্গঠন করে নাম বদলে বিজিবি(বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) করা হয়।
ছা্ত্র-জনতার ওপর পুলিশের গণহত্যার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনার বিচার ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা দল এই সমাবেশ ও আলোচনা সভা করে।
সমাবেশে মুক্তযোদ্ধা দলের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এগুলো হচ্ছে, শেখ হাসিনার দেশে ফিরিয়ে এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার, সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার সাথে জড়িত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিচার, ভুয়া ৫০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল, জামুকা(জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) বাতিল, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সকল শহীদের জাতীয় বীর ঘোষণা এবং আহতদের চিকিসার ব্যয়ভাব রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন এবং অস্বচ্ছল পরিবারকে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রদান।
‘ভারত প্রসঙ্গে’
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ ভারতকে বলতে চাই, আপনারা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন, সেজন্য আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। লড়াই করেছেন, আমাদের পাশাপাশি যুদ্ধে করেছেন কিন্তু এদেশের প্রভু হওয়ার চেষ্টা করবেন না, জনগনের বিপক্ষ হওয়ার চেষ্টা করবেন না।”
‘‘ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারতের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকবে কিন্তু কোনো রকমভাবে আমাদের দেশকে, সাধারণ মানুষকে সম্পর্কে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করবেন না। সার্কের প্রত্যেকটা দেশ আপনাদের বিরুদ্ধে কেনো? ছোট ছোট দেশ…. ওয়াট ইজ মালদ্বীপ, ওয়াট ইজ শ্রীলংকা। আমরা ১৮ কোটি মানুষের দেশ। আমরা চাই, বন্ধুত্ব হবে জনগনের সাথে… সুতরাং বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে বলছি, বাংলাদেশকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করবেন না।”
তিনি বলেন, ‘‘ শেখ হাসিনা ইতিহাসের সবচাইতে বড় ঘাতক, এহেন ঘটনা নাই করে নাই, কত মায়ের বুক যে খালি করেছে… আমরা আজকে মুক্তিযোদ্ধাদের এই সভা থেকে দাবি করব, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে।”
‘‘ ভারতকে বলব, যদি বন্ধুত্ব করতে চান, তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠান।”
‘নিকৃষ্টতম নির্বাচন কমিশন’
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘‘ নির্বাচন কমিশন একটা নিকৃষ্টতম প্রতিষ্ঠান।ভোট ডাকাতি করে এতোদিন আওয়ামী লীগকে বহাল রেখেছে তারা….। এই কমিশন বলেছিলো, আওয়ামী লীগ আসলে ভোটাররা আসবে। ইলেশনের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘুমান, এক ঘুমে ২৪% ভোট ৫৫% হয়ে গেছে দুপুরেই। ”
‘‘ কি ধরনের ইলেশন কমিশন এরা, এখনো তারা কি করে থাকে?”
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা কেউ নির্বাচিত নয়, তাদের সকল নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান তিনি।
‘শেখ হাসিনার নামের সেনানিবাস বাতিলের দাবি’
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ আমি অত্যন্ত গর্ব করি, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে আমরা পাঁচটি কেন্টনমেন্টে বিদ্রোহী সৈনিকেরা বাংলাদেশ সেনা বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এই সেনাবাহিনী সংগ্রামী জনগনের সাথে ছিলো। আমিসহ আরও ২৪ জন তরুন কর্মকর্তা… আমরা ক্যাপ্টেন ছিলাম, জিয়াউর রহমানসহ তিনজন মেজর, আমরা গুটিকতক ক্যাপ্টেন, একজন লেফটেন্টেসহ এই সেনা বাহিনী গড়ে তুলেছি। আমাদেরকে সেনাবাহিনীর ফাউন্ডিং ফাদার মনে করা হয়। এখানে অসংখ্য ছাত্র-জনতা নিয়ে গঠিত হয়েছিলো মুক্তিবাহিনী।”
‘‘ এই সেনা বাহিনী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কি করে অপেক্ষায় ছিলাম। ২রা আগস্টে বর্তমান সেনা বাহিনী প্রধানকে আমি একটা এসএমএস ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলাস…. জনগনের সাথে থাকতে এবং বিপ্লবে যোগ দিতে। আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম কিন্তু মাহেন্দ্রক্ষনে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে সরানোর ব্যাপারে সঠিক ভূমিকা রেখেছে সেজন্য আমি তাদেরকে অভিবাদন জানাই। আমাদের যে দাবি স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার নামে যে কেন্টনমেন্ট করা হয়েছে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি করতে হবে।”
বিগত কয়েকটি নির্বাচনের সাবেক সেনা প্রধানরা ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের’ পক্ষে যেভাবে ‘তোষামোদি’ করেছেন তার কঠোর সমালোচনাও করেন তিনি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদেরকে দেশের আর্দশ বলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হাফিজ বলেন, ‘‘ আবু সাঈদের ছবি এখানে আছে। এরা আর্দশ রোল মডেল বাংলাদেশের। গত কয়েক বছরে আমরা একাত্তর ভুলে গিয়েছিলা। একাত্তরের চেতনায় উদ্বিপ্ত যুবকরা যে এখনো আছে তার প্রমাণ শহীদ আবু সাঈদ।”
‘‘ আবু সাঈদের মৃত্যু সারা বিশ্ব দেখেছে। তার মৃত্যু দৃশ্য দেখে দুই চোখ দিয়ে অশ্রু নির্গত হয়। এমন সাহসী সন্তান এখনো আছে বাংলাদেশে… প্রথমে গুলি লেগেছে, সে শুয়ে পড়ে নাই… তারপরেও দাঁড়িয়ে আছে হাত প্রসারিত করে। হাজার বছর যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আবু সাঈদ হীরো হিসেবে থাকবে।”
‘তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা’
দলের স্থায়ী কমিটিতে স্থান পাওয়া হাফিজ উদ্দিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ গতকাল আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য পুত্র তারেক রহমান আমাকে টেলিফোন করেছিলেন। তাকে একটা কথা বলেছি, যেদিন নির্বাচন হবে, ইনশাল্লাহ বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে।”
‘‘ কিন্তু আমরা যেন আওয়ামী লীগ না হই। আমরা জিয়াউর রহমানের বিএনপি থাকব… কোনো চাঁদাবাজী, কোনো দখলবাজী, কোনো দুর্নীতি আমাদের দলে কেউ করতে পারবে না।এখনো কেউ এসব করতে পারবে না। বিএনপি এসবের বিরুদ্ধে।”
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, ফজলুর রহমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুর, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীরসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
জা ই / এনজি