সকাল ৬:৪৭ | বৃহস্পতিবার | ১লা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২রা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় :শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য চান শিক্ষার্থীরা, আলোচনায় যারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১২ আগস্ট ২০২৪

 

ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরই ভেঙে দেওয়া হয় জাতীয় সংসদ এবং গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর সারাদেশে একযোগে শুরু হয় বিভিন্ন দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের গণপদত্যাগ। এই তালিকা থেকে বাদ যাননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২৯তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালও।

ঢাবি উপাচার্য গত শনিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর থেকেই কে হতে পারেন ঢাবি উপাচার্য তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই।

শিক্ষার্থীদের দাবি, যৌক্তিক দাবিতে যারা সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন, স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে যারা রাজপথে ছিলেন, পাশাপাশি একাডেমিকভাবে অনেক বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন- এমন শিক্ষকদের মধ্য থেকে কাউকে উপাচার্য হিসেবে দেখতে চান তারা। একই সঙ্গে সততা, দক্ষ প্রশাসনিক গুণাবলি, শিক্ষার্থীবান্ধব ও পরিচিতমুখ শিক্ষককেই উপাচার্য বানানো উচিত বলে মনে করেন তারা। যিনি এই ক্রান্তিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাল ধরতে পারবেন শক্ত হাতে, তিনি যে দলেরই হোক, তাকে শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানাবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসাইন ফাহিম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য এমন কেউ হবেন যিনি একাডেমিকভাবে যোগ্যতাসম্পন্ন। যিনি প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে পারবেন। আমরা এমন উপাচার্য চাই না যিনি নিয়োগ পাওয়ার পরপরই রেজিস্ট্রার, প্রভোস্ট, ডিন- এসব জায়গায় ‘মাইম্যান’ বসিয়ে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে চাইবেন।’

এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা ক্ষমতার ভারসম্য চাই। তিনি অবশ্যই বিরুদ্ধ মতের প্রতি সহনশীল থাকবেন। আগের উপাচার্যদের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অ্যাক্সেস খুবই কম থাকতো। নতুন উপাচার্যের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে তিনি যেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে যান, তাদের কথা শোনেন। আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য উপাচার্য চাই, কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে- এমন ভিসি চাই না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটি সুন্দর বাংলাদেশ এখন সবার প্রত্যাশা। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার সেটি করতে সক্ষম হবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারাই এখন মূল দক্ষতা। এই ক্রান্তিকালে যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সুপথ দেখাতে পারবেন, অন্তর্বর্তী সরকার তাকেই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেবেন বলে আমরা মনে করি। ব্যক্তি যোগ্য হলে নির্দ্বিধায় আমরা তা মেনে নেবো।’

ঢাবির উপাচার্য হিসেবে এরই মধ্যে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন গুণী শিক্ষক। তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. বি. এম. ওবায়দুল ইসলাম, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান।

 

উল্লিখিত শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ‘ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইউট্যাব’র সভাপতি অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। সাদা দলের শিক্ষকদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতা, প্রশাসনিক ও একাডেমিক যোগ্যতা, ইতিবাচক ভাবমূর্তির ওপর ভিত্তি করে তিনি বেশ এগিয়ে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নেতৃত্ব দেওয়ার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও সামনের সারিতে থেকে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন এবং শিক্ষকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট তার নেতৃত্বেই সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কারফিউ ভেঙে শিক্ষকরা মিছিল বের করেন।

সাদা দলের বর্তমান আহ্বায়ক ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক লুৎফর রহমানও ঢাবির নতুন উপাচার্য হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন সিনেট ও সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন পদেও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্লিন ইমেজ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীবান্ধব আচরণের কারণে তিনি বেশ সুপরিচিত। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে হওয়া স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলপন্থি শিক্ষকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

এই দুই দুজনের বিষয়ে শিক্ষকদের দাবি, বিএনপিপন্থি শিক্ষক হলেও অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম এবং লুৎফর রহমান যোগ্যতা ও সততার দিক থেকে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তারা দুজন বিএনপিপন্থি শিক্ষক হলেও বিভিন্ন বিষয়ে বেশ নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে পাশে থাকেন।

এই দুজনের পাশাপাশি আলোচনার রয়েছেন উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের একাডেমিক অ্যাডভাইজার এবং আরণ্যকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানও আলোচনায় রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ও বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এবং ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর হিসেবে দীর্ঘ সাড়ে ৭ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।

বামপন্থি শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান ঢাবি উপাচার্য পদের জন্য বেশ আলোচনায় রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন যৌক্তিক আন্দোলন ও মানবাধিকার প্রশ্নে বেশ জোড়ালো ভূমিকা রাখতে দেখা যায় তাকে। তবে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ধর্মচর্চা করেন এমন মুসলিম শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে বিদ্বেষী মনোভাব পোষণের অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের বড় একটি অংশ বিশেষ করে ডানপন্থি ছাত্র-শিক্ষকরা তার উপাচার্য হওয়াকে ইতিবাচকভাবে নেবে না বলে মনে করছেন অনেকে।

 

এসএম/ এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *