বিনোদন প্রতিবেদক
৩০ জুলাই ২০২৪

এভাবে যে শেষযাত্রা হবে, তা যেন অকল্পনীয়। কেউ মানতে পারছিলেন না। কফিনে মোড়া নিথর দেহের শাফিন আহমেদকে দেখে এ কথা সবাই বলছিলেন। শেষযাত্রার প্রাক্কালে শেষবারের মতো শাফিনের মরদেহ আনা হয় গুলশানের আজাদ মসজিদে। আজ সকাল থেকেই ঢাকার আকাশ ছিল মেঘলা। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও হচ্ছিল। মরদেহ যখন পৌঁছায়, তখনো বৃষ্টি হচ্ছিল। এই বৃষ্টি উপেক্ষা করে শাফিনকে শেষবিদায় জানাতে আজাদ মসজিদে জড়ো হতে থাকেন সংগীতাঙ্গনের অনেকে। ছিলেন অনুজ, অগ্রজ শিল্পীসহ কলাকুশলীরাও। শাফিনকে দেখে তাঁরা কান্না ধরে রাখতে পারেননি। পরিবার ও সহকর্মীদের চোখের জলে বিদায় নেন শাফিন আহমেদ।

২৫ জুলাই বাংলাদেশ সময় সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার হাসপাতালে মারা যান শাফিন আহমেদ। যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে চার দিনের মাথায় গতকাল সোমবার শাফিনের মরদেহ বহনকারী উড়োজাহাজ ঢাকায় পৌঁছায়। এরপর তাঁর মরদেহ গুলশানে রাখা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টায় শাফিনের মরদেহ নেওয়া হয় গুলশানের আজাদ মসজিদে। সেখানে একে একে হাজির হন তাঁর স্বজন ও সহকর্মীরা।
শাফিনের মরদেহ দেখতে আসা স্বজন ও সহকর্মীরা একটা কথাই বলছিলেন, এমন তো কোনো বয়স ছিল না শাফিন আহমেদের। মাত্র ৬৩ বছর। যেভাবে সংগীতাঙ্গনের মেধাবীরা বিদায় নিচ্ছেন, তাতে তো বিরাট শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। শাফিনের বড় ভাই ও মাইলস ব্যান্ডের সদস্য হামিন আহমেদ বললেন, ‘নিজের ব্যাপারে একটু বেশি উদাসীন ছিল। মন-মর্জিতে চলত। নিজের প্রতি আরেকটু যত্নবান হলেও পারত।’

গুলশান আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে শাফিনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। বেলা তিনটায় বাবার কবরে সমাহিত করা হয় শাফিন আহমেদকে। এ সময় পাশে ছিলেন ভাই তাহসিন আহমেদ, হামিন আহমেদ, স্বজনসহ মাইলসের সদস্যরা। শাফিন আহমেদের কবরের পাশেই মা কিংবদন্তি নজরুলশিল্পী ফিরোজা বেগম শায়িত আছেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে শাফিন আহমেদের কুলখানির খবরও জানানো হয়েছে। হামিন আহমেদ জানান, শাফিনের আত্মার মাগফিরাত কামনায় আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পর বনানী কবরস্থানের পাশে গুলশান কমিউনিটি মসজিদে তাঁর কুলখানি হবে।
দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উড়াল দেন ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ। দেশটির একটি অঙ্গরাজ্য থেকে আরেক অঙ্গরাজ্যে গানে গানে শ্রোতা মাতাবেন, তেমনটাই পরিকল্পনা ছিল। শুরুটা ঠিকঠাক হয়েছিল। দ্বিতীয় কনসার্ট ছিল ২০ জুলাই ভার্জিনিয়ায়। কনসার্টের আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর আয়োজকদের উদ্যোগে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে ভর্তির দিনই তাঁর গুরুতর হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। কয়েক দিন ভেন্টিলেশনে থাকার পর গত বৃহস্পতিবার চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর এই অকালপ্রয়াণে রেখে গেছেন দুই বড় ভাই তাহসিন ও হামিন, স্ত্রী রুমানা দৌলা, তিন পুত্র মাইসিম, আজরাফ ও রেহান এবং এক কন্যা রানিয়া ছাড়াও অগণিত ভক্ত-বন্ধু-স্বজন।