রাত ৮:৪৩ | শনিবার | ২৪ মে, ২০২৫ | ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল | ২৫ জিলকদ, ১৪৪৬

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে কালো ছায়া দেখছেন মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ মে ২০২৫

 

 

‘দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে কালো ছায়া’ দেখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।
একই সঙ্গে নেতা-কর্মীদের যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রস্তুত থাকারও কথা বলেন তিনি।

থাইল্যান্ডের ব্যাংকক রুটনিন আই হসপিটালের কেবিন থেকে মঙ্গলবার দুপুরে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের এক যৌথ সভায় নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে এরকম শঙ্কার কথা বললেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন,  আজকের এই সভাটি আমি অত্যন্ত মূল্যবান ও তাৎপর্য্ সভা বলে আমি মনে করি…এজন্য যে, এখন আবার নতুন করে…. যেটা আমরা হাজার হাজার ছাত্রদের রক্তের বিনিময়ে যে নতুন একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করবার এবং সত্যিকার অর্থে ফ্যাসিবাদ মুক্ত একটা আধুনিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবার সেখানে আমরা দেখছি একটা কালো ছায়া এসে দাঁড়াচ্ছে।

অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেয়া, জনগনকে যে অধিকার সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করবার এবং ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবার একটা পায়তারা শুরু হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন,  আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, বিভাজনের রাজনীতি আবার শুরু হয়েছে। এখানে গোত্রে গোত্রে বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনগুলোকে পরস্পরের মুখোমুখি করার একটা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু করা হয়েছে। আমরা দেখতে পারছি যে, কিছু মানুষ যারা সরকারের মধ্যে অনুপ্রেবশ ঘটিয়ে বাংলাদেশকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।

গত ১৩ মে চোখে জটিলতা দেখা দিলে উন্নত চিকিতসার জন্য ব্যাংকক যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।একদিন পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েই তার বাম চোখে সফল অস্ত্রোপচার হয়। চিকিৎসকরা তাকে তাদের টানা দুই সপ্তাহ নিবিড় পর্যবেক্ষনে থাকতে বলেছেন। কেবিনে আছেন তিনি। সঙ্গে তার সহধর্মিনী রাহাত আরা বেগমও রযেছে।

দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়া্উর রহমানের মৃত্যবার্ষিকীর প্রতিবছরে যে যৌথ সভা হয় সেটিতে মির্জা ফখরুলই সভাপতিত্ব করেন। অসুস্থতার কারণে বিদেশে থাকলেও এবারও তিনি এই সভায় সভাপতিত্ব করেছেন ভার্চুয়ালি।

‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে’

গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকের এই সময়টা অত্যন্ত মূল্যবান সময় বলে আমি মনে করি। এখন আবার নতুন করে যেটা আমরা কয়েক হাজার ছাত্রদের রক্তের বিনিময়ে নতুন একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করবার এবং সত্যিকার অর্থে ফ্যাসিবাদ মুক্ত একটা আধুনিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবার সেখানে আমরা দেখছি একটা কালো ছায়া এসে দাঁড়াচ্ছে।

‘‘ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেয়া, জনগনকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবার এবং ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবার একটা পায়তারা শুরু হয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, বিভাজনের রাজনীতি আবার শুরু হয়েছে। এখানে গোত্রে গোত্রে বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনগুলোকে পরস্পরের মুখোমুখি করার একটা ষড়যন্ত্র চক্রান্ত শুরু করা হয়েছে। আমরা দেখতে পারছি যে, কিছু মানুষ যারা সরকারের মধ্যে অনুপ্রেবশ ঘটিয়ে বাংলাদেশকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।”

‘বিএনপির ওপরে এখন গুরু দায়িত্ব’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ওপরে সবসময় গুরু দায়িত্ব এসে পড়ে। সেই দায়িত্ব হচ্ছে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবার দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশকে আবার নতুন করে গড়ে তোলবার দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব হচ্ছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার কাজ করতে শুরু করেছিলেন, এখন যে তরুন নেতা নতুন স্বপ্নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তোলবার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব।”

‘‘ তাদের সমস্ত স্বপ্নগুলোকে বাংলাদেশের জনগনের আশা-আকাংখাগুলোকে বাস্তবায়িত করবার জন্যে বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মীকে অত্যন্ত সজাগ ও সচেতনভাবে তাদেরকে কাজ করতে হবে এবং রুখে দাঁড়াতে হবে যেকোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আমি তাই অনুরোধ করব আমাদের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদেরকে, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দলের যারা আছেন, যেখানে আছেন … অত্যন্ত সচেতনভাবে আমরা যেন এই বিষয়গুলো মনে রাখি।”

‘‘ একই সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেন কেউ কখনো কেড়ে নিতে না পারে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব যেন কেউ কখনো বিনষ্ট করতে না পারে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আর কেউ যেন কখনো ফ্যাসীবাদ, স্বৈরাচার দিয়ে দাবিয়ে রাখতে না পারে সেজন্য বিএনপির প্রতিটি কর্মীকে সেই অতন্দ্র ভূমিকা পালন করতে হবে।”

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এই যৌথ সভায় জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে ২৬ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত আট দিনের কর্মসূচি ঠিক করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিবের অনুমতি নিয়ে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

‘জিয়া এক ক্ষনজন্ম মহাপুরুষ’

জিয়াউর রহমানের বর্ণাঢ্য জীবনকর্ম তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও আধুনিক করবার জন্যে যে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছিলো সেই কর্মযজ্ঞের সূচনা করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। দুর্ভাগ্য আমাদের এই জাতির আমরা এই ক্ষনজন্মা মহাপুরুষকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারিনি।”

‘‘ আজকে যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, যারা বাংলাদেশকে ১৫ বছর ধরে একটা ফ্যাসিস্ট শাসনের মধ্যে রেখেছিলো, যারা আজকেও এখনো ষড়যন্ত্র করে চলেছে সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশকে আবারও জনগনকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবার জন্যে, বাংলাদেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করবার জন্যে এরকম সময়ে আমাদেরকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম বার বার মনে রাখতে হবে, স্মরণ করতে হবে।”

‘শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বিএনপির নেতা-কর্মীরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিলে, প্রায় ১৭শ নেতা-কর্মীকে এ্যানফোর্স ডিজএপিয়ারেন্সের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। সেই অবস্থা থেকে আজকে একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যে, আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করব।”

‘‘ শহীদ প্রেসিডেন্টে জিয়াউর রহমানের যে স্বপ্ন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে স্বপ্ন, তারেক রহমানের যে স্বপ্ন সেই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়নে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদা বার্ষিকীতে আজকে আসুন শোক নয়, শোককে আমরা শক্তিতে পরিণত করতে চাই এবং এভাবে অনুপ্রাণিত হতে চাই যাতে করে সমস্ত অপশক্তিগুলোকে পরিাজিত করে আমরা যেন সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক, আধুনিক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।”

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী ছাড়া দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *