রাত ১০:৫৭ | শনিবার | ২৪ মে, ২০২৫ | ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল | ২৫ জিলকদ, ১৪৪৬

৫ মাসে প্রায় ৩০০ সন্ত্রাসী হামলা দেখেছে খাইবার পাখতুনখোয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৯ মে ২০২৫

 

সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদীদের হাতে রীতিমতো জর্জরিত হচ্ছে পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য খাইবার পাখতুনখোয়া। চলতি ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১ পর্যন্ত গত সাড়ে পাঁচ মাসে মোট ২৮৪টি সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে রাজ্যটিতে।

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রাদেশিক পুলিশের সন্ত্রাস দমন বিভাগের (কাউন্টার টেররিজম ইউনিট-সিটিডি) বরাত দিয়ে সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ। সিটিডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে রাজ্যের উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলায়। এরপর যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে বান্নু ডেরা ইসমাইল খান, পেশোয়ার এবং কুররম।

এসব হামলার পরিকল্পনা ও সংঘটিত করার দায়ে মোট ১ হাজার ১১৬ জন সন্দেহভাজনের তালিকা করেছে খাইবার পাখতুনখোয়া পুলিশ। এই সন্দেহভাজনদের মধ্যে ৩৫১ জন উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলার এবং ১৬৬ জন কুররম জেলার।

তালিকার ১ হাজার ১১৬ জনের মধ্যে থেকে এ পর্যন্ত ৯৫ জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভাব হয়েছে। সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানও পরিচালনা করছে সেনা-পুলিশ যৌথ বাহিনী। এসব অভিযানে খাইবার পাখতুনখোয়াজুড়ে গত সাড়ে ৫ মাসে নিহত হয়েছে ১৪৮ জন সন্ত্রাসী। সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে রাজ্যের ডেরা ইসমাইল খান জেলায়—৬৭ জন।

সিটিডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে খাইবার পাখতুনখোয়ায় সন্ত্রাসী হামলার ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০২৩ সালের পুরো বছরে ৬৫১টি এবং ২০২৪ সালের পুরো বছরে ৭৩২টি হামলা ঘটেছে এই রাজ্যে।

“তবে এ বছর যে হারে সন্ত্রাসী হামলা ঘটছে, তাতে আমরা আশঙ্কা করছি যে ২০২৫ সালে সংঘটিত হামলার সংখ্যা অতীতের যে কোনো বছরকে ছাড়িয়ে যেতে পারে”, দ্য নিউজকে বলেন সিটিডির একজন কর্মকর্তা।

সন্ত্রাসবাদী হামলার ঊর্ধ্বগতির পেছনে পাকিস্তানের সরকারের ঔদাসীন্যও অনেকাংশে দায়ী। সন্ত্রাসীদের হামলার মূল লক্ষ্য পুলিশ স্টেশন ও নিরাপত্তা চৌকিগুলো। খাইবার পাখতুনখোয়ার অধিকাংশ পুলিশ স্টেশন, নিরাপত্তা চৌকি এমনকি পুলিশ লাইনের চারপাশে নিরাপত্তাসূচক সীমানা প্রাচীর নেই। ফলে এসব স্থাপনা সহজেই সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

এছাড়া খাইবার পাখতুনখোয়ার সন্ত্রাস কবলিত জেলাগুলোতে যেসব পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তা তাদের নিজেদের জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন, তাদেরকে আলাদাভাবে কোনো প্রণোদনা বা ভাতাও প্রদান করে না পাকিস্তানের সরকার। ফলে পুলিশও সেই অনুযায়ীই কাজ করে।

সিটিডির তথ্য অনুসারে, গত সাড়ে ৫ মাসে যে ২৮৪টি সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে খাইবার পাখতুনখোয়ায়, তাতে নিহত হয়েছেন ৮৬ জন পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তা এবং আহত হয়েছেন ২ শতাধিক।

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ভৌগলিক আয়তন ১ লাখ ১ হাজার ৭৪১ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭ জন। আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্তবর্তী এই রাজ্যটিতে দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তৎপরতা চালাচ্ছে পাকিস্তানের তালেবানপন্থি গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি।

টিটিপির মূল লক্ষ্য খাইবার পাখতুনখোয়াকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং সেখানে আফগান তালেবানদের আদলে একটি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। পাকিস্তানের সরকার কয়েক বছর আগে টিটিপিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, গোষ্ঠীটিকে নির্মূল করতে নিয়মিত খাইবার পাখতুনখোয়ার বিভিন্ন জেলায় সেনা-পুলিশ অভিযানও পরিচালিত করছে—কিন্তু সরকারের সাফল্যের হার সন্তোষজনক নয়।

 

সূত্র : জিও টিভি / এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *