আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১২ মে ২০২৫
সরকারের সঙ্গে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সংঘাতের পর নিজেকে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুরস্কভিত্তিক সশস্ত্রগোষ্ঠী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)। গোষ্ঠীটির একাধিক নেতা ও তুরস্কের কয়েক জন রাজনীতিবিদের বরাত দিয়ে সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
এর আগে গত মার্চের প্রথম দিকে পিকেকের কারাবন্দি নেতা আবদুল্লাহ ওচালানের এক ঐতিহাসিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে তুরস্কের সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল পিকেকে। ওচালান সেই সময়েই নিকট ভবিষ্যতে দলটির বিলুপ্তির ইঙ্গি দিয়েছিলেন।
আধুনিক কুর্দিস্তান বলতে যে অঞ্চলটিকে বোঝায়, সেটি তুরস্কের পূর্বের কিছু অংশ, উত্তর ইরাক, দক্ষিণপশ্চিম ইরান ও উত্তর সিরিয়া— এই চারটি দেশের কুর্দিভাষী অঞ্চলগুলোর মধ্যে বিস্তৃত। তুরস্কে এর আয়তন সবচেয়ে বেশি, কুর্দিভাষী জনগণের সংখ্যাও বেশি। দেশটির মোট ৮ কোটি ৫০ লাখ জনসমষ্টির মধ্যে কুর্দিদের হার ২০ শতাংশ।
কুর্দিদের জন্য একটি পৃথক, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবিকে সামনে রেখে ১৯৮৪ সাল জন্ম হয় কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকে’র। একই বছর থেকে সশস্ত্র সংগ্রামও শুরু করে গোষ্ঠীটি।
তুরস্কে পিকেকের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি ছিল। পিকেকে’র সঙ্গে সংঘাতে গত ৪ দশকে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন তুরস্কে। তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো এই পিকেকে-কে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তকমা দিয়েছে।
সম্প্রতি ইরাকে গোষ্ঠীটির ১২তম সম্মেলন (কংগ্রেস) হয়েছে। সেখানেই সশস্ত্র সংগ্রামের পথ পরিহার এবং সংগঠন হিসেবে পিকেকের বিলুপ্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইরাকভিত্তিক বার্তাসংস্থা ফিরাত নিউজ এজেন্সি।
এ ইস্যুতে পিকেকের এক জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। তিনি এর সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন ইতোমধ্যে পিকেকের যাবতীয় সামরিক অপারেশন বন্ধ করা হয়েছে এবং অস্ত্র জমা দেওয়ার ব্যাপারে আঙ্কারার সঙ্গে আলোচনা চলছে।
জানা গেছে আঙ্কারার সঙ্গে পিকেকের এই সমঝোতার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখেছে তুরস্কের কুর্দিপন্থি রাজনৈতিক দল ডিইএম পার্টি। এই দলটি তুরস্কের তৃতীয় বৃহত্তম দল। পিকেকের কারাবন্দি শীর্ষ নেতা আবদুল্লাহ ওচালানের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকের পর তিনি পিকেকের বিলুপ্তির ব্যাপারে রাজি হয়েছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন ডিইএম পার্টির উপনেতা তাইপ তেমেল।
“পিকেকের এই সিদ্ধান্ত শুধু কুর্দিভাষী জনগণের জন্যই নয়, বরং তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতির জন্যও একটি বড় সুখবর।”
সূত্র : রয়টার্স / এনজি