রাত ১২:২৬ | রবিবার | ২৫ মে, ২০২৫ | ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল | ২৬ জিলকদ, ১৪৪৬

ভারত-পাকিস্তান হামলার জেরে শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন : পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৭ মে ২০২৫

 

 

ব্যাপক দরপতন চলছে দেশের শেয়ারবাজারে। আজ বুধবার দুপুরে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া প্রায় সব শেয়ারকে দর হারিয়ে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। এতে প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ১১৭ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৮৩৪ পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা যায়। সূচক পতনের হার ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। দুপুর সাড়ে ১২টায় ১২৮ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ হারিয়ে ৪৮২৩ পয়েন্ট পর্যন্ত নামতে দেখা গেছে। পতনের হার বিবেচনায় ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির পর এটাই সর্বোচ্চ দর পতন। ওই দিন সূচক হারিয়েছিল ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।ব্যাপক দরপতনে আতঙ্ক বিরাজ করছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। গত কয়েক বছর ধরেই শেয়ারবাজারে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। তবে গতকালের পতনের ভালো ব্যাখ্যা মিলছে না।


পেহেলগাম হামলায় ২৬ পর্যটক নিহতের ঘটনায় প্রতিশোধ হিসেবে ভারত ‘অপারেশন সিন্ধুর’ নাম দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে বিমান হামলা চালিয়েছে। এর পর পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায়। এতে উভয় পক্ষের বেশ ক্ষয়ক্ষতি খবর দিচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তারা জানান, এ ঘটনার কারণে এমন পতন হতে পারে।

লেনদেন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দুপুর ১টা পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ৩৯৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৯৩টির কম-বেশি কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭৭টি দর হারিয়ে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। এ সময় সামান্য দর বেড়ে কেনাবেচা হচ্ছিল মাত্র ৮ শেয়ার। দিনের লেনদেনের প্রথম তিন ঘণ্টায় ৩৬৯ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হতে দেখা যায়। প্রায় সব শেয়ারের দর পতনে প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স এ সময় ১১৪ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৮৩৭ পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা গেছে। এ সময়ের সূচক পতনের হার ছিল ২ দশমিক ৩০ শতাংশ।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরুর ফলে উভয় দেশের শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, যা এশিয়ার অন্যান্য বাজারেও প্রভাব ফেলেছে। ভারতের হামলার পর পাকিস্তানের করাচি স্টক এক্সচেঞ্জ এর কেএসই-১০০ সূচক বুধবার সকালে ৬৫০০ পয়েন্ট বা ৫.৫ শতাংশ পতন হয়। এটি ২০২৩ সালের পর থেকে সবচেয়ে বড় একদিনের পতন হিসেবে বিবেচিত

 হচ্ছে।

এদিকে ভারতের শেয়ারবাজারে প্রথমদিকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও, বাজার দ্রুত স্থিতিশীলতা ফিরে পায়। বুধবার সকালে সেনসেক্স সূচক ৬৯২ পয়েন্ট হ্রাস পেলেও পরে তা ২০০ পয়েন্টের বেশি বেড়ে ৮০,৮৪৫ পয়েন্টে পৌঁছায়। নিফটি ৫০ সূচকও প্রাথমিক পতনের পর ২৪,৪৩৮ পয়েন্টে পৌঁছাতে দেখা গেছে। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রভাব এশিয়ার অন্যান্য বাজারেও দেখা গেছে। সিঙ্গাপুরের এসজিএক্স নিফটি সূচক বুধবার সকালে ১ দশমিক ২০ শতাংশ হ্রাস পেলেও পরে তা শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হ্রাসে সীমাবদ্ধ থাকে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সতর্ক মনোভাবের প্রতিফলন।

 

এদিকে পুঁজিবাজার নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ১১ মে দুপুর ১২টায় উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রটি জানিয়েছে, পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা সভায় সভাপতিত্ব করবেন। সভায় অর্থ উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে, কয়েক মাস ধরেই শেয়ারবাজারে মন্দা অবস্থা চলছে। এর মধ্যে শেষ তিন সপ্তাহ ধরে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন চলছে। এই টানা দরপতনের মধ্যেই প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান সংঘাতে জড়িয়েছে। এতে দেশের শেয়ারবাজারে পতনের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতেই পুঁজিবাজার নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা।

শেয়ারবাজারে এমন ঢালাও দরপতনের কারণ হিসেবে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি এবং ডিএসইর পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার পরিস্থিতির কারণে শেয়ারবাজারে এমন দরপতন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের শেয়ারবাজার এমনিতেই এখন বটম লাইনে রয়েছে। এখান থেকে বাজার খুব নিচে নামার সম্ভাবনা কম। আশা করছি বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। ডিএসইর এক সদস্য বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই দেশের শেয়ারবাজার পতনের মধ্যে রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের এখন দিশেহারা অবস্থা। এ পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে।

তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা গণমাধ্যম এসেছে। দুই দেশের মধ্যে সৃষ্ট এই পরিস্থিতির কারণে সবার মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। আতঙ্কে অনেক বিনিয়োগকারী কম দামে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছেন। এ কারণেই লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয় শেয়ার বিক্রির চাপ না বাড়ালে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে আশা করছি।

 

টি আই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *