রাত ১১:৪৩ | শনিবার | ২৪ মে, ২০২৫ | ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল | ২৫ জিলকদ, ১৪৪৬

‘লন্ডনের চিকিৎসায় অনেকটুকু সুস্থ আছেন খালেদা জিয়া’

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৬ মে ২০২৫

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চিকিৎসার পর শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেকটুকু সুস্থ আছেন বেগম খালেদা জিয়া।  মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে ‘ফিরোজা’র সামনে এক সংবাদ ব্রিফিঙে বিএনপি চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন একথা জানান।

তিনি বলেন, উনি অনেকটা শারীরিক মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে লন্ডন থেকে ফেরত এসেছেন। চিকিৎসা পরবর্তিতে উনার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা আলহামদুলিল্লাহ অনেকটুকু উনি সুস্থ আছেন। মানসিকভাবেও উনি স্টাবেল (স্থিতিশীল) আছেন। তবে ১৪ ঘন্টার জার্নি এবং রাস্তার এই জার্নির কারণে উনি শারীরিকভাবে একটু অবসন্ন। তারপরও মানসিক ভাবে উনার অবস্থা অত্যন্ত স্থিতিশীল আছে। খালেদা জিয়ার এই সুস্থতা যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান অধ্যাপক জাহিদ।

চার মাস লন্ডনে উন্নত চিকিসা শেষে মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে কাতারের আমিরের দেয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছান। সেখানে থেকে গাড়িতে করে তার গুলশানের বাসা ফিরোজায় আসতে দুই ঘন্টারও বেশি সময় লাগে। বিমান বন্দর থেকে গুলশানের বাসায় পর্যন্ত সড়ক পথে দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকরা প্রচন্ড বিএনপি চেয়ারপার্সনের গাড়িবহর ধীর গতিতে এগুতে হয়। এক পর্যায়ে নির্ধারিত রুট পরিবর্তন করে নিরাপত্তা বাহিনী তাকে ফিরোজায় পৌঁছায় বেলা দেড়টায়।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের জন্য কাতারের ‘রাজকীয় বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স’ ‘বিনাভাড়ায়’ দেয়ার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং কাতার কতৃপক্ষের প্রতি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কতৃজ্ঞতার কথাও জানান তিনি।

অধ্যাপক জাহিদ জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন লন্ডনে এদিন কম চার মাস ছিলেন। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকে তার চিকিৎসা হয়েছে। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। টানা ১৭ দিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন।

৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। এর মধ্যে বয়সের কারণে লিভার ট্রান্সপার করা সম্ভব নয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য সমস্যাগুলো এখন অনেকটা স্বাভাবিক।

তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় বহরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে গত ৮ জানুয়ারি লন্ডনে যান। লন্ডনে উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সরকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশ্বন্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিমান কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের প্রতি খালেদা জিয়ার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কথাও জানান জাহিদ।

বিএনপি চেয়ারপার্সনকে বিমান বন্দর থেকে গুলশানের বাসায় নিয়ে আসতে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, বিজেবি, পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যমের সংবাদ কর্মীরা যে দায়িত্ব পালন করেছেন সেজন্য তাদের প্রতি দলের চেয়ারপারসন এবং দলের পক্ষ থেকে কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ম্যাডামের চিকিৎসাধীন সময়ে লন্ডনে উনার জ্যেষ্ঠপুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৭ জানুয়ারি উনাকে রিসিভ করা থেকে শুরু করে ৫ মে পর্যন্ত উনি লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় এবং উনার বাসায় উনার পরিবারের সকল সদস্যদের তত্ত্বাবধায়নে বিশেষ করে উনার তিন নাতনির কথা বলতেই হয়, ব্যারিস্টার জায়মা রহমান, জাফিয়া রহমান, জাহিয়া রহমান তারা সব সময় তাদের দাদু অর্থাৎ আমাদের দেশনেত্রীর বেগম খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে প্রশান্তি আনার জন্য যে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেজন্য আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানসহ তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। একই সঙ্গে ইউক বিএনপির এমএ মালেক, কয়ছর এম আহমেদসহ সকল প্রবাসী বিএনপির নেতা-কর্মী ছাড়াও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দলের প্রবাসী নেতা-কর্মীরা বিএনপি চেয়ারপার্সনের চিকিৎসার জন্য যে সহযোগিতা করেছেন এবং দেশবাসী সুস্থতার জন্য দোয়া করেছেন সেজন্য দেশনেত্রী সবার কাছে তার কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। আল্লাহর কাছে আমরা শুকরিয়া জানাই তার রহমতে দেশনেত্রী অনেকটা সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসতে পেরেছেন।

এদিকে বিএনপির চেয়ারপার্সনের বাসভবনের সামনে ভিড় না করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) এখন কিছুটা অসুস্থ। চিকিৎসকেরা তাকে কমপক্ষে আট ঘণ্টা সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই কেউ এখানে স্লোগান দেবেন না, ভিড় করবেন না। দয়া করে আপনারা সবাই এখন যার যার বাড়িতে ফিরে যান। সবাইকে ‘ফিরোজা’র সামনে থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করছি, যেন এখানে কোনো গন্ডগোল না হয়। পরে সময় হলে আপনাদের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন।

 

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *