রাত ১০:৪৮ | শনিবার | ২৪ মে, ২০২৫ | ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল | ২৫ জিলকদ, ১৪৪৬

জোবাইদা রহমানের জন্য প্র্রস্তুত ‘মাহবুব ভবন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৪ মে ২০২৫

 

জোবাইদা রহমানের জন্য প্র্রস্তুত করা হয়েছে ধানমন্ডির ‘মাহবুব ভবন’। মঙ্গলবার শাশুড়ি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেশে ফিরছেন তিনিও, যিনি ১৭ বছর আগে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে স্বামী তারেক রহমানের সাথে ঢাকা ছেড়েছিলেন।

সাবেক নৌ বাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খানের বাসা ধানমন্ডির ৫ নং সড়কে এই ‘মাহবুব ভবন’।

এখানে এখন তার সহধর্মিনী সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু এবং বড় মেয়ে শাহীনা জামান ও তার পরিবার বসবাস করেন। সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু গত কয়েকদিন আগে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ছোট মেয়ে জোবাইদা রহমান ঢাকায় এসে বাবার বাসায় উঠবেন বলে বাসার নিরাপত্তা ও সাজ সজ্জার করা হয়েছে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুম্মন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যা্ন জনাব তারেক রহমানের ওয়াইফ জোবাইদা রহমান উনি আসবেন এই বাসায় সেজন্য বাসার সাজ-সজ্জা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস, জেনারেটর প্রভৃতি কাজ চলছে।”

‘‘ ইনশাল্লাহ উনি(জোবাইদা রহমান) আসার আগেই এই বাসা সব কাজ-কর্ম শেষ হবে। উনাকে রিসিভ করার জন্য বাসা প্রস্তুত হয়ে যাবে।”

১৭ বছর আগে জোবাইদা রহমান দেশ ছেড়েছিলেন একমাত্র মেয়ে ছোট জায়মাকে নিয়ে স্বামী তারেক রহমানের সাথে। এক-এগারোর সরকার এবং পরবর্তিতে আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনার সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন স্বামীর সাথে জোবাইদাও।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, তাঁর সহধর্মিণী জুবাইদা রহমান ও জুবাইদা রহমানের মা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় একটি মামলা করে দূর্ণীতি দমন কমিশন। এই মামলায় জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের ওই সাজা স্থগিত হয়ে যায়।

মাহবুব আলী খানের দুই মেয়ের মধ্যে জোবাইদা রহমান ছোট সেজন্য বাবা-মায়ের খুব আঁদুরের। জন্ম সিলেটে। পড়ালেখা করেছেন ঢাকায়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বাবা-মায়ের আগ্রহে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। তিনি সেখান থেকে এমবিবিএস পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মেধায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৫ সালে বিসিএস দিয়ে কর্ম জীবন শুরু করেন সরকারি চিকিৎসক হিসেবে। জোবাইদা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস(বিসিএস-স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।

২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডন যাওয়া পরে শেখ হাসিনার সরকার তাকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করে।

লন্ডন যাওয়ার পরে জোবাইদা ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে স্নাতকোত্তর-এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।

জোবাইদা রহমানের বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান ১৯৭৮ সালের ৪ নভেম্বর ১৯৮৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। এরপর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের সময়েও তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জুবাইদা রহমানের চাচা।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন মাহবুব ভবনের পুরো কাজ-কর্ম তদারকি করছেন। তিনি বলেন, ‘‘ আপনি দেখতেই পারছেন মাহবুব ভবন এমনিতেই পরিপাটি একটি বাসায়, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। তারপরও আমাদের চেয়ারম্যান সাহেবের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বাসার ভেতরে এবং বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক করেছি।”

‘‘ বাসার চারপাশে দেয়ালের উপরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তার ব্যবস্থার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্য ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স(সিএসএফ) সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।”

এই বাসার চারপাশে দেয়াল রয়েছে। বাসার আঙিনায় সামনের দিকে রয়েছে ফুলের বাগান। আছে নিরাপত্তায় কর্মীদের জন্য গার্ড রুম।

রুমন বলেন, ‘‘ আপনি দেখছেন বাসভাবনের তিন দিকে বিভিন্ন জনের বাসা-এপার্টমেন্ট রয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব বলেছেন.. আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন নিরাপত্তার নামে এমন কিছু করতে যেয়েও না যাতে প্রতিবেশীদের কোনো অসুবিধা হয়, যাতে মানুষজনকে ডিসট্রার্ভ না করা হয়। যেমন পেছনের দিকে দেয়ালের পাশে ওই ভবনের বারান্দাটা দেখছেন একেবারেই দেয়াল ঘেষে।”

‘‘ উনারা(প্রতিবেশীরা) ১৭ বছর কিছু করেননি, এখনো তারা কিছু করবেন না… তাদের ডিস্টার্ভ করে আমাদের যেন আরাম করা না হয়। বুঝতেই পারছেন চেয়ারম্যান সাহেব যেমনটি চান এই বাসার পরিবারের সদস্যরা ঠিক সেটাই আমাদেরকে বলেছেন। সব দিক বিবেচনায় রেখে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছি।”

জোবাইদা রহমানের জন্য আলাদা গাড়ি ও তার নিরাপত্তার সাথে নিয়োজিত সদস্যদেরও গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইতিমধ্যে গত ৩০ মে বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে জানিয়ে সশ্বস্ত্র গানম্যান, পুলিশ প্রটেকশন, বাসায় পুলিশ পাহারা, আর্চওয়ে বসানোর জন্য চিঠি দিয়েছেন।

রুমন জানান, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার নিরাপত্তায় থাকা নিয়োজিত কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে এই বাসভবন দেখে করণীয় ঠিক করে গেছেন।

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *