নিজস্ব প্রতিবেদক
৩০ এপ্রিল ২০২৫
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা অতিরিক্ত শুল্কের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতা করতে চায় বাংলাদেশ। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা ট্রাম্প সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবো, সমঝোতা করবো। কিন্তু ওদের চটানো যাবে না। আমেরিকা সরকার তিন মাস সময় দিয়েছে (আরোপিত শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত), প্রয়োজনে আরও বেশি সময় চাইবো।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামশর্ক কমিটির ৪৫তম সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে এ সভা হয়।
চলতি মাসের শুরুতে বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেখানে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করে দেশটি। তবে পরবর্তীসময়ে ৯০ দিনের জন্য অতিরিক্ত শুল্ক স্থগিত করা হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিকারকদের মধ্যে স্বস্তি ফেরে।
বর্তমানে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য চ্যালেঞ্জের মুখে আছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে নিয়ে দেশটা গড়ার। আমাদের উদ্দেশ্য মানুষের জীবন-জীবিকা সহজ করা। গালমন্দ খাচ্ছি, সেটা মেনে নিছি। আগামী বাজেটে চেষ্টা করবো সহানুভূতিশীল হওয়ার, আপনারাও সহানুভূতিশীল হবেন। উইন উইন অবস্থা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশিদের ধারণা খুবই ভালো। সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশের কিছু মানুষের সমালোচনা। তখন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। গঠনমূলক সমালোচনা করুন। বিশ্বব্যাংক আমাদের সঙ্গে আছে, আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতা চলছে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আইএমএফের ঋণের ব্যাপারে আমরা খুব একটা চিন্তিত নই। এরই মধ্যে সামষ্টিক অর্থনীতিতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে প্রত্যাশার ফুলঝুড়ি থাকবে না এবং বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট দেওয়া হবে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এবারের বাজেট হবে বাস্তবসস্মত। বাজেটে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ আরও সহজ করার চেষ্টা করব। এ সময় উপদেষ্টা জানান, দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে। শুধু সরকারি খাত নয়, বেসরকারি খাতের টেকসই উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। আমাদের ভুল-ত্রুটি হতে পারে, তবে আমরা আপনাদের জন্যই কাজ করছি।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হলো ব্যয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে ন্যায্যতাভিত্তিক এবং লক্ষ্যভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করা। ব্যবসা, বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়নে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে সভায় জানান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। এ সময় বেসকারি খাতের কাছে আরও সুনির্দিষ্ট এবং গঠনমূলক বাজেট প্রস্তাবনা আহ্বান করেন তিনি।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান। এ সময় বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে দৃঢ় করতে ব্যবসায়িক খরচ (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) কমিয়ে আনা, বিনিয়োগ আকর্ষণ ও সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শিপিং ও পরিবহন ব্যয় হ্রাস, সাশ্রয়ী ও গুণগত জ্বালানি নিশ্চিতকরণ, স্বচ্ছতা ও সুশাসন বাস্তবায়নের পাশাপাশি কর আদায়ের ক্ষেত্রে হয়রানি ও জটিলতা দূরীকরণের মাধ্যমে ব্যবসা-বান্ধব কর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে আগামী বাজেটে বিশেষ আগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, এনবিআর এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে দূরত্ব কমাতে কর ব্যবস্থাপনার ডিজিটাইজেশন একটি বড় ভূমিকা রাখবে। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সেবা ও অভিযোগ নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন ডিজিটাইজেশন প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে জানান তিনি।
সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে দেশের ব্যবাসার পরিবেশ উন্নয়নে খাতভিত্তিক প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান, এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মো. আলমগীর হোসেন এবং অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জা ই / এনজি