রাত ১:৪৭ | বৃহস্পতিবার | ১লা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২রা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

ড. জিল্লুর রহমান : বাংলাদেশে ভূমিকম্পে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হতে পারে ভয়াবহ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

৩০ এপ্রিল ২০২৫

 

 

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হতে পারে ভয়াবহ। অনেক মানুষ বাস্তুহারা হবে। তাদের জীবিকা এবং সামাজিক স্থিতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এখনই প্রস্তুতি ও সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতের ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হবে না।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. জিল্লুর রহমান এসব কথা বলেন।

‘বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি ও করণীয়’ শীর্ষক এ বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে তিনি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বলেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রধানত এর ভৌগলিক অবস্থানের কারণে। ভারতীয় ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষস্থলে অবস্থিত হওয়ায় দেশটি নিয়মিত ভূমিকম্পের হুমকির মুখে রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর এবং দিনাজপুর অঞ্চলগুলো অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।

অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান আরও বলেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে দেশে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। প্রস্তুতির অভাবে বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে প্রাণহানির ঝুঁকি অনেক বেশি হতে পারে।

‘অবকাঠামোগত দিক থেকেও ঝুঁকি প্রবল। কারণ, বাংলাদেশের অনেক ভবন ভূমিকম্প সহনশীল নয় এবং নিম্নমানের নির্মাণশৈলীর কারণে ধসের সম্ভাবনা বেশি। ফলে পরিবহন ও ইউটিলিটি সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।’

জিল্লুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকেও ভূমিকম্পের প্রভাব ভয়াবহ। একটি বড় ধরনের ভূমিকম্পের পর পুনরুদ্ধার ব্যয় হাজার হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও সেবা খাতে স্থবিরতা সৃষ্টি হবে, যার প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতেও পড়বে। জরুরি সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রেও রয়েছে বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে শহরের সরু রাস্তা ও সীমিত চিকিৎসা সুবিধা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যাহত করবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক প্রধান প্রকৌশলী ড. আব্দুল লতিফ হেলালী বলেন, সব নতুন ভবন নকশা ও বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি)-২০২০ কঠোরভাবে পরিচালনা করতে হবে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন গঠনতন্ত্রে বিদ্যমান ভবনগুলোর ভূমিকম্পের ক্ষতির মূল্যায়ন করতে হবে এবং প্রয়োজন হলে পুনর্গঠন বা মজবুত করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রকৌশলী, স্থপতি এবং নগর পরিকল্পনাবিদদের জন্য ছাত্র পার্টনার (প্রফেশনাল রেজিস্ট্রেশন প্রোগ্রাম) নেটওয়ার্ক রাখা প্রয়োজন, যেন তারা সঠিকভাবে আলোচনা করতে পারেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ভূমিকম্প নিয়ে ফায়ার সার্ভিস নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে সবচেয়ে বেশি জরুরি জনগণকে সচেতন করা। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে উদ্ধারকারী হিসেবে তৈরি করা।

এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন স্থপতি ও নগরবিদ মো. ইকবাল হাবিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক পরিচালক মেজর (অব.) এ কে এম শাকিল নেওয়াজ, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া প্রমুখ।

 

 

টি আই/ এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *