এনজি ডেস্ক

জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে নৃশংস হামলায় নিরস্ত্র ২৮ হিন্দু পর্যটকের প্রাণহানি ও বহু আহতের ঘটনার পর ভারতে মানুষের আবেগ এবং উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় চড়েছে। এই হামলার ঘটনায় ভারতীয় রাজনীতিক, গণমাধ্যম ও অন্যান্যরা পাকিস্তানকে দায়ী করেছে এবং অনেকে পাকিস্তানে সামরিক আগ্রাসন পরিচালনার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের এই দাবিটি সম্পর্কে তিনটি বিষয়ে অবশ্যই কথা বলা দরকার।
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধের ফলাফল অপ্রত্যাশিত। যুদ্ধ শুরু করা সহজ। তবে এই যুদ্ধ কীভাবে শেষ হবে তা কেউই কখনই বলতে পারেন না। নেপোলিয়ন ও হিটলার দ্রুত বিজয়ের প্রত্যাশায় রাশিয়ায় আক্রমণ করেছিলেন। কিন্তু আমরা সকলেই জানি, তাদের এই আগ্রাসন কীভাবে শেষ হয়েছিল।
তৃতীয়ত, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পারমাণবিক শক্তিধর।
সুতরাং যুদ্ধে শুরু করার কথা বলাটা নির্বোধের মতো শোনায়। আমার মতে, ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় হামলার পর সবচেয়ে ভালো ঘটনাটি ঘটেছিল। ওই সময় ভারতে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে পৌঁছায়। পুলওয়ামা হামলায় ভারতীয় সৈন্যদের প্রাণহানির ঘটনায় ভারতের মানুষের কষ্টের কথা স্বীকার করে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, তিনি ভারতীয়দের এই ব্যথা বুঝতে পারেছেন।
সাবেক এই পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, পাকিস্তানও সন্ত্রাসবাদের শিকার এবং অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে ভারতের যে কোনও ধরনের তদন্তে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত আছে তার দেশ।
পেহেলগামে হামলার ঘটনার পর ভারতের সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং পাল্টা হিসেবে পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের আইনি বৈধতার বিতর্কে না গিয়ে আমার মনে হচ্ছে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে এবং উভয় দেশের সাধারণ মানুষেরই ভোগান্তি বাড়বে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পাকিস্তানের অনেক অঞ্চল ইতোমধ্যে তীব্র পানির সংকটে ভুগছে এবং সিন্ধু ও পাঞ্জাব প্রদেশের মাঝে এই বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তকে পাকিস্তান সরকার যুদ্ধ ঘোষণার সামিল বলে আখ্যা দিয়েছে।
এখন ভারতের মতো উজানের দেশ থেকে যদি পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় বা কমে আসে, তাহলে পাকিস্তানের বিশাল এলাকা রীতিমতো কারবালায় রূপ নিতে পারে। এতে পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ, শাসকগোষ্ঠী নয়।
ভারত ও পাকিস্তান—উভয় দেশই দারিদ্র্যপীড়িত। দুই দেশের দরিদ্র জনগণের উচিত পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে, বিশাল দারিদ্র্য, ব্যাপক বেকারত্ব, শিশুদের ভয়াবহ অপুষ্টি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থার করুণ অবস্থার মতো অভিন্ন শত্রুর বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করা।
আমি ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দেওয়া পরামর্শের কথা স্মরণ করিয়ে উভয় দেশের প্রতি উত্তেজনা কমিয়ে সুদূরপ্রসারী ও রাষ্ট্রনায়কসুলভ পথ অবলম্বন করার জন্য আহ্বান জানাই।
জা ই / এনজি