নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ এপ্রিল ২০২৫
‘ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংসদ নির্বাচন হবে’ বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের সাথে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিং একথা জানান।
তিনি ‘‘ আমাদের প্রধান উপদেষ্টা প্রথম থেকে বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুন… আজকের আলোচনায় আমরা কয়েকটা বিষয় স্পষ্ট করেছি সেটা আপনাদের বলি… একটা হচ্ছে, ডিসেম্বর থেকে জুন মানে আমরা ইচ্ছা করে দেরি করে করে মে বা জুন মাসে নির্বাচন করব সেটা না। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত দ্রুত তাড়াতাড়ি সম্ভব।”
‘‘ যদি আমরা ডিসেম্বরে সম্ভব হয় ডিসেম্বরেই… না হয় জানুয়ারিতে এভাবে বলেছি যে, ডিসেম্বর থেকে জুন মানে আমরা ইচ্ছা করে একটু বেশি সময়ে ক্ষমতা ভোগ করার জন্য অকারণে আমরা একমাস বা দুই মাস বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলাম মোটেই সেটা না। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব…. ডিসেম্বর থেকে জুন মানে হচ্ছে, ডিসেম্বর থেকে জুন অযথা কালক্ষেপনের বিন্দু মাত্র চেষ্টা আমাদের মধ্যে থাকবে না।”
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘‘ এখন উনারা(বিএনপি নেতারা) জানতে চেয়েছেন যে, সংস্কার যদি হয়ে যায় এতো দেরি করার মানে কি আছে? আমরা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছি, জুলাই চাটার্ড প্রণীত হলেও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা, নীতিগত ব্যবস্থা যেটি গ্রহন করতে মাঝে মধ্যে সময় লাগে। যেমন একটা উদাহরণ দিয়ে বলেছি যে, ডিজিটাল সুরক্ষা আইন… এটা ২৩ বার ড্রাফট করেছি বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নেয়ার জন্য এবং বেশ কয়েক মাস সময় লেগেছে। সেজন্য আমরা বলেছি যে, আমরা তো পিন পয়েন্ট করতে পারব না।”
‘‘ জুলাই চাটার্ড প্রণীত হওয়ার পর অতো দিনে হয়ে যা্বে… আমরা তো অংশীজনের সাথে কথা বলে ব্রড কনসালেটেশনের ভিত্তিতে করব।”
‘রোডম্যাপ কতদিন আগে হতে পারে’
আফিস নজরুল বলেন, রোডম্যাপ ঘোষণা করতে কত দিন লাগতে পারে সেটা নিয়ে তো আলোচনা হয়নি। এটা আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেবেন।”
‘‘ আপনারা একটা জিনিস জানেন, নির্বাচনের সিডিউল… আগের নির্বাচনের যদি প্যাটার্ণ দেখেন তাহলে সিডিউল ঘোষণা করার পর ৬০ দিন দিলেই হয়। সেই হিসেবে যখন আমরা নির্বাচন করব তার অন্তত দুই মাস আগে আমাদেরকে রোডম্যাপটা ঘোষণা করতে হবে।”
‘উপদেষ্টাদের বক্তব্যে প্রসঙ্গে’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘ এটা ব্যাপারে একটু খালি আপনার ভিন্নমত হতে পারে… সেটা হচ্ছে, উনার যেটা বলেছেন যে, ডিসেম্বরের মধ্যেই ইলেকশন দিলে ভালো হয়।”
‘‘ উনারা বলেছেন যে, আমাদের কথা-বার্তার মধ্যে এতো অস্পষ্ট থাকে… কেউ কেউ আমাদের কোনো কোনো উপদেষ্টা কথা বলেন। আমরা ক্যাটাগরিক্যালি বলেছি যে যেটাই বলুক না কেনো আমাদের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষনে বার বার যেটা রিপিট করেছেন সেটাই সরকারের অবস্থান। যেখান থেকে অন্য কেউ যদি বেফাঁস কথা নিজস্ব বিবেচনায় কথা বলেন সেটা তারা(বিএনপি) যেন বিভ্রান্ত না হন।”
‘বিচার করা প্রসঙ্গে’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘ আমাদের জনগনের তো একটা আকাংখা আছে যে, আমরা বিচার করে যাই। আজকে বাংলাদেশে ২০ হাজারের বেশি তরুণ জীবন দিয়েছে আর ৫০/৬০ হাজার মানুষ শারীরিকভাবে পারমানেন্টলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, চোখ হারিয়েছে তাদের বিচারের যে দাবি এটা তো গণঅভ্যুত্থানে প্রধান আকাংখা আছে… আমরা যদি কোনো বিচার না করে যাই আমরা যদি ইলেকশন দেই আমরা মানুষের কাছে নিজের কাছে জবাব দিবো কিভাবে?”
‘‘ ফলে শুধু ইলেকশন, সংস্কার, বিচার এবং আমাদের সরকারের গৃহীত কিছু পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে এজন্যই ডিসেম্বর থেকে জুন টাইম বারটা করা হয়েছে।কিন্তু আমরা ক্যাটাগরিক্যালি বলেছি, এটা কোনোভাবে জুনের বেশি যাবে না। যে যেই কথাই বলুক না কেনো, প্রধান উপদেষ্টার অঙ্গীকার রিপিটেডলি বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই জুন অতিক্রম করা হবে না।”
‘সংলাপের পর উনাদের দেখে হ্যাপী লেগেছে’
নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব সন্তুষ্ট হননি এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘ বিএনপি মহাসচিবের এটা বলার অবশ্যই অধিকার আছে। একটা আলোচনার থেকে একজন একভাবে পারসিভ করে আরেকজন আরেকভাবে পারসিভ করে।”
‘‘আমার কাছে উনাদেরকে দেখে হ্যাপী লেগেছে। যখন আমাদের ডায়লগটা শেষ হয়েছে। মনে হয়েছে উনাদের মনে যে প্রশ্ন ছিলো তার অনেকগুলো উত্তর উনারা পেয়েছেন। আমার কাছে এটা মনে হয়েছে। ফখরুল ভাইয়ের কাছে অন্যরকম মনে হতে পারে।”
বিএনপি বলেছে ডিসেম্বরে, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ডিসেম্বর থেকে জুন এটাতে বিএনপির সাথে অন্তবর্তীকালীন সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘‘ কোনো দূরত্ব তৈরি হয় নাই। আপনাদেরকে উত্তর দিলাম তো। ফখরুল ভাই আপনাদের বলেছেন যে, উনি সন্তুষ্ট না।”
‘‘আমরা আলোচনার শেষ প্রান্তে আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, আমাদের অনেক ব্যাখ্যা উনার বুঝতে পেরেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে উনারা সন্তুষ্ট।”
‘আশঙ্কার কোনো কারণ নেই’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘ উনার (ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে) যে সমস্ত আশঙ্কার কথা বলেছেন, আমরা আমাদের মতো বলেছি যে, এই সমস্ত আশংকার কোনো কারণ নাই। এসব ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি।”
‘‘ আমরা অত্যন্ত রেসপেক্টফুলি উনাদের মতামত বিবেচনায় নিয়েছি।আমরা এ ব্যাপারে আরও সচেতন থাকব।”
‘শেখ হাসিনার বিচারে কোনো বিলম্ব হচ্ছে না’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘উনারা বলেছেন যে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মামলা বিলম্ব হচ্ছে। আমরা বলেছি যে, এর আগে বিচার হয়েছে সেটা কম্পেয়ার করে দেখিয়েছি। বলেছি যে, কোনো রকম বিলম্ব করা হচ্ছে না।আমরা উনাদের সব কিছু বুঝিয়ে বলার পর উনার আর কথা বলেননি। তার মানে উনারা বুঝতে পেরেছেন।”
‘‘ তারা আরেকটা ট্রাইব্যুনাল গঠন করার কথা বলেছেন। আমরা বলেছি যে, এটা অচিরেই হযে যাবে।”
এক প্রশ্রের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ উনারা ট্রাব্যুনালের সংখ্যা বাড়াতে বলেছেন।আমরা বাড়ানোর প্রক্রিয়া কম পক্ষে একমাস আগে থেকে শুরু করেছি। আমাদের তো উপযুক্ত বিচারপতি নিয়োগ করতে হবে, আমাদের লজিস্টিক ঠিক করতে হবে।”
‘‘ আমরা এটা এক থেকে দুই সাপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে।”
আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘দুই ঘন্টা আলোচনা হয়েছে… অত্যন্ত খোলামেলা পরিবেশে আন্তরিকতার সাথে আলোচনা হয়েছে। তারা মন খুলে কথা বলেছেন… ।”
‘‘ উনার বলেছেন, বিএনপি দেশে গত ১৫ বছর যাবত নিরবিচ্ছিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে। অবশ্যই এটার জন্য আমরা শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়েছি।”
‘‘ উনারা কিছু বিষয় বলেছেন যে, আমাদের অন্তবর্তীকালীন সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যেটা বিএনপির প্রতিকূলে গেছে। আমরা উদাহরণ দিয়েছি… সিদ্ধান্ত আছে যেটা বিএনপির অনুকূলে গেছে। তারপরও উনারা বলেছেন যে, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা বলেছি যে, পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস… পুরো সরকারি আইনজীবীদের অফিসটা পূনর্গঠন হয়েছে মাত্র তিন মাস আগে…. এ্ সময়ে ৮ হাজারের মতো মামলা প্রত্যাহার হয়েছে, ১৬ হাজারের মতো মামলা লিস্টেড আছে। আমরা বলেছি যে, এতো দ্রুত গতিতে সম্ভব কিনা? উনার আমাদেরকে বলেছেন, আমাদের বুঝতে পেরেছেন “
‘সংস্কার প্রস্তাবে বিএনপি পজেটিভ’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘ উনার(বিএনপি) বলেছেন যে, দলের যে সংস্কার ভাবনা এটা বহু পুরনো… উনার সবসময় সংস্কারপন্থি দল… আমরা এটা এগরি করেছে। অবশ্যই বিএনপি সবসময় সংস্কারের কথা বলেছে।”
‘‘ সবচেয়ে বড় কথা বিএনপি আমাদের সংস্কারের জন্য যেসব কমিশনে আছে … ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবাবলী আছে সেটার ক্ষেত্রে বিএনপির অত্যন্ত পজেটিভ রেন্সপন দেখিয়েছে। তারা বলেছে যে, তারা শিগগরিই ঐকমত্য কমিশনের সাথে মিটিংয়ে বসবে এবং কমিশনের অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাবে তারা ঐক্যমত পোষন করে। জুলাই চাটার্ড খুব দ্রুত গতিতে হয়ে যাবে…এটা তারাও আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, বিএনপি সংস্কারের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক।”
তিনি বলেন, তারা আমাদেরকে বলেছেন, তারা অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাবের সাথ ঐকমত্য পোষণ করে। সংস্কার করার দীর্ঘ ঐতিহ্য বিএনপির রয়েছে… এটা আমরা স্বীকার করি, সন্মান করি।”
‘‘ এটাও বলেছি, জুলাই চাটার্ড দ্রুত হয়ে গেলে তা নির্বাচনকে তরান্বিত করার ক্ষেত্রে একটা ভূমিকা রাখতে পারে।”
সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সদস্যরা ছিলেন।
জা ই / এনজি