দুপুর ২:১০ | শনিবার | ২৪ মে, ২০২৫ | ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল | ২৫ জিলকদ, ১৪৪৬

৪৫ বছরের আইন পেশা: ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ঘটনাবহুল জীবন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০৪ মে ২০২৫

 

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক মারা গেছেন। রোববার (৪ মে) বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে তিনি মারা যান বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির। প্রায় ৪৫ বছর আইন পেশায় ছিলেন সিলেটের এই কৃতী সন্তান। এর মধ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের আইনজীবী ছিলেন। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক মামলা, ইত্তেফাক, একুশে টিভি ও ব্যাংক-বিমাসহ বহু মামলার আইনজীবী ছিলেন তিনি।

দীর্ঘদিন ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে। পরবর্তীসময়ে জামায়াত থেকেও পদত্যাগ করেন। জামায়াত থেকে বেরিয়ে যোগ দেন এবি পার্টিতে। পরে সেখান থেকেও পদত্যাগ করেন।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের জন্ম ১৯৪৯ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের শেখলাল গ্রামে। বিএ (অনার্স) ও এমএ ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮০ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি লন্ডনেই আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।

দেশে ফিরে ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। এরমধ্যে ১৯৮৬-১৯৮৭ সালে ধানমন্ডি ল’ কলেজে, ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৪ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি দ্য ল’ কাউন্সেল নামে একটি আইনি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী হন।

তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। দুই ছেলেও ব্যারিস্টার এবং সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশা পরিচালনা করছেন।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। এর আগে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের আইনজীবী ছিলেন। পরে ২০১৫ সাল থেকে আইন পেশা পরিচালন করেন।

যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দল থেকে পদত্যাগের কথা জানান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তখন দলটির তৎকালীন সেক্রেটারি ডা. শফিকুর রহমান এক বার্তায় বলেছিলেন, তার পদত্যাগে আমরা ব্যথিত ও মর্মাহত। পদত্যাগ করা যে কোনো সদস্যের স্বীকৃত অধিকার। আমরা দোয়া করি তিনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আমরা আশা করি তার সঙ্গে আমাদের মহব্বতের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।

এরপর নতুন দল আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গত বছরের ১৭ আগস্ট সেই পদ থেকেও পদত্যাগ করেন তিনি।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক আলোচিত একুশে টিভি মামলা, ইত্তেফাকের মামলা, অধ্যাপক গোলাম আযমের নাগরিকত্ব মামলা, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সংসদ সদস্য পদ সংক্রান্ত মামলা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ নিয়ে মামলা ও ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া আবদুল কাদের মোল্লা, অধ্যাপক গোলাম আযম ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনা করেন। বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের উপদেষ্টা ছিলেন। রয়েছে তার বিভিন্ন প্রকাশনা।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরে বিমানবন্দরে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, আমি একজন আইনজীবী। আমি কোর্ট রুম ব্যারিস্টার। আমি আইনের অঙ্গনে আমার অবদান রাখার চেষ্টা করবো। আইনের শাসন একটি অতি বড় জিনিস। দেশে যদি আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে আমাদের রাজনীতি সফল হবে। অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। সুতরাং আইন অঙ্গনে আমার বিচরণ, আইন অঙ্গনে আমি থাকবো। আইন অঙ্গনের মাধ্যমে আমি দেশ এবং জাতির খেদমত করার চেষ্টা করবো।

 

 

শ ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *