নিজস্ব প্রতিবেদক
১৮ মে ২০২৫
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভরত চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। রোববার বিকেলে দাবি-দাওয়া বিবেচনার আশ্বাস ও কয়েক ঘণ্টার আলোচনার পর চাকরিচ্যুতদের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
তিনটি শর্তে বিক্ষোভ স্থগিত করা হয়েছে বলে সন্ধ্যার পরে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়া ৮ সদস্য জানান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বরখাস্তকৃত সৈনিক মো. কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সৈনিক নাইমুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে সে কারাগারে। সোমবার সেনাবাহিনীর সদস্যরা ও আমাদের ৮ প্রতিনিধি গিয়ে তিনসহ গ্রেপ্তার সকলকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘১০ বছরের নিচে যেসব সৈনিকের চাকরির বয়স ছিল, তাঁদের পূণর্বহালের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা। যাদের চাকুরির বয়স নাই, তাদের পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। তবে নাইমুলসহ অন্যদের মুক্তি না দিলে ফের কর্মসূচি দেয়া হবে। সে পর্যন্ত সবাইকে ঢাকায় অবস্থান করার আহ্বান জানানো হয়েছে।’
এর আগে রোববার দুপুর থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিক্ষোভ শুরু করেন চাকরিচ্যুতরা। কর্মসূচির মধ্যেই সেনাবাহিনীর ভেটেরান ডিরেক্টর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুর রহমানসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাঁদের কথা শোনেন। বিকেল প্রথম দফার আলোচনা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তাদের দাবি-দাওয়াগুলো শুনেছি। আমরা সকল দাবি-দাওয়া নোট করেছি। এগুলো নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘তাদেরকে বলেছি, সবাইকে আলাদা আলাদা করে আবেদন করতে। আবেদনের ঠিকানা আমরা দিয়ে গেছি। ইনডিভিজুয়াল কেসের মেরিট অনুযায়ী আমরা বসব, আলাপ-আলোচনা করে আপনাদের যতদ্রুত সম্ভব, যতখানি দেওয়া সম্ভব আমরা এড্রেস করব। এটাও বলেছে যে, সেনাবাহিনীর যে আইন-শৃঙ্খলা এটা অবশ্যই মেইনটেইন করতে হবে। আমরা মানবিকভাবে যতটুকু সাহায্য করার করব।’ তারা কি আপনাদের কথা মেনেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ তারা মেনেছেন। তারা অপেক্ষা করবেন। আমাদের কার্যক্রম চলবে।’
গত শনিবার তাদের একজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আমিনুর রহমান বলেন, ‘ওটা একটা আইনগত বিষয়; মামলার বিষয় এবং তাকে আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সহায়তা করা যায় আমরা করব। ৮০০ মতো এপ্লিকেশন পড়েছে, যার মধ্যে একশর বেশি আমরা এড্রেস করেছি। আপনাদের কথায় তারা সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মনে তো হলো সন্তুষ্ট।’ সবশেষে তিনি এই কর্মসূচি সমাপ্ত করার অনুরোধ জানান।
পরে চাকরিচ্যুত নৌবাহিনীর নাবিক বাহাউদ্দিন বলেন, ‘নয় মাস যাবত আমাদের দাবিটি করে আসছি। আমাদের ব্যাপারটা কালক্ষেপণ হয়ে গিয়েছিল। তাই আমরা একটা অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। আমাদের প্রধান সমন্বয়ককে ধরে নেওয়া হয়েছিল। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা বলেছেন, কালকে বা পরশুদিনের মধ্যে প্রথম ধাপে একটা ফলাফল দেবেন। চাকরিচ্যুত সকলকেই বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে আসবেন। যে অপরাধ করেনি তাকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে আসা হবে। তবে গুরুতর অপরাধীকে দেওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘তাদের প্রতি বিশ্বাস রেখে আমরাও ধৈর্য্য ধরছি। তাদের প্রতি বিশ্বাস রাখছি। তারা চাইলে আমাদের বিষয়গুলোর ডিসপোজাল দিতে পারেন। তারা অবশ্যই দেবেন এই বিশ্বাস রয়েছে।’
এরপর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্রেসক্লাব থেকে বের হওয়ার সময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুর রহমানের গাড়ি বহরের সামনে চাকরিচ্যুতরা শুয়ে পড়েন। পরে প্রেস ক্লাবের ভেতর থেকে গাড়ি আর বের হতে পারেনি। পরে আমিনুর রহমান আবার গাড়ি থেকে নেমে সবাইকে বোঝান। তার কথার বিপরীতে চাকরিচ্যুতরা প্রেসক্লাবে বসেই সমাধান করতে বলেন।
বিকেল পৌনে ৬টা পর্যন্ত এর কোনো সমাধান হয়নি। তখন থেকে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। প্রেসক্লাবের ভেতরে প্রায় শতাধিক সেনা সদস্য উপস্থিত ছিল। পরে সাড়ে ৭টার দিকে সমঝোতার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীরা সদস্য প্রেসক্লাব থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেন। এরপর সেনা কর্মকর্তা সেখান থেকে বেরিয়ে যান।
এদিকে এই অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকা সেনানিবাসের প্রবেশমুখ ও চারপাশে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া পাহারা। সকাল থেকে জাহাঙ্গীর গেট, বিএফ শাহীন কলেজ, মহাখালী রেলগেট, কাকলী, বনানীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়, ছিল সেনাবাহিনীর সদস্যরাও।
স্থানীয় সুত্রগুলো জানায়, জাহাঙ্গীরগেট এলাকায় উভয়পাশে পুলিশ ও সেনাবাহিনী দিনব্যাপী কড়া পাহাড়ায় ছিল। এছাড়াও বিএফ শাহীন কলেজের সামনে মহাখালী রেলগেটে, কাকালী, বনানী ও কচুক্ষেতেও ছিল পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তবে এসব এলাকায় কাউকে জড়ো হতে দেখা যায়নি।
জা ই / এনজি
