নিজস্ব প্রতিবেদক
১৫ জুলাই ২০২৪
সারাদেশে কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপরে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের হামলার ঘটনাকে নজির বিহীন উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল সোমবার বিকালে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই নিন্দা জানান।
তিনি বলেন, তাদের (কোটা আন্দোলনকারীরা) দাবি নিয়ে তারা সফলভাবে আন্দোলন করেছে। আমি মনে করি যারা আন্দোলন করছে তাদের পরিবার আছে, তাদের আত্বীয় স্বজন, বহু লোক আছে। সকলে কিন্তু আজকে একটা ন্যায়সঙ্গত সমাধান খোঁজার অপেক্ষা করছে। সেটা না করে যদি আপনি লাঠিপেটা করেন, আপনি মিথ্যা মামলা দেন তাহলে তো সেটা সেটার সমাধান পাবার সুযোগ নেই। আমরা কোটা আন্দোলনকারীদের ওপরে ছাত্রলীগের যে হামলা, তাদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ করছি।
আমীর খসরু বলেন, দেশটা তো কোনো গোষ্ঠির হতে পারে না। আজকে তাদের প্রতিবাদ তো গোষ্ঠির বিরুদ্ধে…দেশ তো গোষ্ঠির হতে পারে না, দেশ সকলের জন্য।
‘রাজাকার রাজাকার’ শ্লোগানের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ওরা(আন্দোলনকারীরা) বলছে, ‘চাইলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’। আপনি যখন অধিকার চাইবেন, কেউ কেউ বলে ষড়যন্ত্র করছে, কেউ কেউ বলে বিএনপি উস্কানি দিচ্ছে, কেউ কেউ বলে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধের শক্তি, কেউ কেউ বলে রাজাকার, এসমস্ত কথা বলে, এগুলোকে মূলধন করে অনেকদিন জাতিকে তাদের সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এগুলোকে আর মূলধন করার সুযোগ নাই। নতুন প্রজন্মের কাছে এগুলোর গ্রহনযোগ্য কিছু নাই, তারা সেটাই বলছে, নতুন প্রজন্ম সেটা বুঝাবার চেষ্টা করছে। এসবকে মূলধন করে মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার কারো নেই। নতুন প্রজন্ম সেই বক্তব্যটাই দিচ্ছে, সেজন্য তারা আন্দোলন করছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা কি শ্লোগান দিয়েছে? ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার। আন্দোলনকারীদের এটা শ্লোগান। রাজাকার রাজাকার পর্যন্ত বলে অর্ধেক শ্লোগান দিলে হবে না, শ্লোগানটা পুরোটা বলতে হবে। পুরো শ্লোগানটা যদি মাথায় রেখে আমার মনে কেউ কোনো সমস্যা দেখতে পারছে না। আরো শ্লোগান আছে আমি সেটা এখানে বলতে চাচ্ছি না।
কেনো হচ্ছে এরকম প্রশ্ন করা হলে আমীর খসরু বলেন, এটা কোটা আন্দোলনকারীদের নিজস্ব দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছে। এটা বাংলাদেশের মুক্তির আন্দোলন নয়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ যে গণতান্ত্রিক সরকার না থাকার কারণে, অবৈধ দখলদার একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের কারণে তাদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে সরকার জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা জনগনের কাছে দায়বদ্ধ না তারা জনগনের কাছে জবাবদিহি না, এটাই মূল সমস্যা। না হলে যদি জনগনের কাছে জবাবদিহি একটা নির্বাচিত সরকার থাকতো এটার যৌক্তিক সমাধান খুবই সহজ।
তিনি বলেন, এই যৌক্তিক সমাধান হচ্ছে এই দেশে আগামী দিনে কি একটা মেধাভিত্তিক দেশ গড়তে চান না মেধাহীন দেশ গড়তে চান। আপনি কি দলীয় লোকদের নিয়ে দেশ গড়তে চান না কি সকলকে নিয়ে দেশ গড়তে চান, আপনি কি একটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তৈরি করে দেশের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চান না কি জাতীয় ঐক্যমতে দেশটা গড়তে চান। বিভক্তি সৃষ্টি করে বিভিন্ন শ্লোগানকে এখানে বলে, বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে পুরো জাতিকে বিভক্ত করে সেভাবে দেশ গড়তে চান না কি সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ দেশ গড়তে চান, এটা আপনাকে ঠিক করতে হবে।
দলটির সদস্য সচিব ফারুক হাসানের নেতৃত্বে বৈঠকে যুগ্ম আহ্বায়ক এস ফাহিম, তারেক রহমান, আব্দুল্লাহ, ইমাম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। দুই বৈঠকে আমীর খসরুর সাথে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।
এরপর সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষন পরিষদের আহ্বায়ক ইসমাইল সম্রাটের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক হয়। এই বৈঠকে ছিলেন, সাজ্জাদুর রহমান রাফি, রিমন হোসেন, হামিদ ফিথু, তাওহীদুর ইসলাম, রাসেল হোসেন, মুহাম্মদ ইসহাক হাবিব ও হাসিবুর রহমান রাকিব।
গত চার দিনে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বাম গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, জাতীয়বাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট এনডিএ, গণফোরাম, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, এলডিপি, নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাথে আলাদা আলাদা বৈঠক করেন বিএনপির নেতারা।
জা ই /এনজি