সন্ধ্যা ৭:০১ | শনিবার | ২৪ মে, ২০২৫ | ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল | ২৫ জিলকদ, ১৪৪৬

সাম্য হত্যাকান্ডের পেছনে ‘রাজনৈতিক কারণ’ আছে —-রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ মে ২০২৫

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকান্ডের পেছনে ‘রাজনৈতিক কারণ’ আছে বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এক মানববন্ধনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘এ্রখনো কেনো ক্যাম্পাসে লাশ পড়ছে, এখনো কেনো ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরছে, এখনো কেনো রক্তের আলপনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে? এখন তো আওয়ামী দোসররা নেই। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন তাদেরকে যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন তারা সমর্থন করেছে। এখন কেনো লাশ পড়বে?”

‘‘ সাম্য.. ছাত্র দলের এফ রহমান হলের একটি সম্পাদকীয় পদে রয়েছে। কী কারণ ছিলো? কী অন্যায় করেছিল সাম্য? পুলিশ গ্রেফতার করেছে তিনজন ভবঘুরে। আমরা তো মনে হয় এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে… রাজনৈতিক কারণ না থাকলে এই ধরণে সাম্য যারা চেহারা সুদর্শন, সৌম্য নাম তার সাম্য… তাকে হত্যা করবে কে? ভবঘুরেরা কেনো হত্যা করবে?”

শাহরিয়ার আলম সাম্যের ফেসবুকে দেয়া পোস্টের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘‘ কয়েকদিন আগে সে ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছে। কারণ শাহবাগে জাতীয় সঙ্গীত বন্ধের জন্য একটা আন্দোলন চলছিলো তার বিরুদ্ধে সে একটা পোস্ট দিয়েছে জাতীয় সঙ্গীতের পক্ষে। যারা জাতীয় সঙ্গীতের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছিলো তাদের বিরুদ্ধে তার একটা বার্তা ছিল। এটাই কী কারণ?”

‘‘আমরা দেখেছি, ফ্যাসিবাদীর আমলে পার্শ্ববর্তী দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে আরবারকে হত্যা করা হয়। আজকে জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা, একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললে পরে তার জীবন চলে যায়। অর্থাৎ যারা দেশের পক্ষে, যারা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, যারা এই দেশের স্বাধীনতার পক্ষে, যারা জাতীয় সঙ্গীতের পক্ষে, যারা জাতীয় পতাকার পক্ষে তাদের জীবন চলে যায়। আমি এজন্য বলেছি, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ আছে।”

‘সাম্যহত্যাকারীদের শাস্তি না হলে পরিণতি ভয়াবহ’

রিজভী বলেন, ‘‘ আমি অবিলম্বে সাম্যকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার রাজনীতি শত্রু কারা… আমরা একটু আভাষ পাচ্ছি। এই রাজনৈতিক শত্রুদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসুন।”

‘‘ তা না হলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে।”

মঙ্গলবার মধ্যরাতে ক্যাম্পাসের কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খুন হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। শাহরিয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক।

গত জানুয়ারি মাসে ফজলুল হক হলে তোফাজ্জল নামে এক যুবক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে ক্যাম্পাসে।

‘পুলিশ বিভাগের প্রতি অনুরোধ’

রিজভী বলেন, ‘‘ আমি পুলিশ বিভাগকে বলব, ভালো করে খতিয়ে দেখুন। ভবঘুরে গ্রেফতার করেছেন… মানুষকে কিন্তু সব বিষয় সহজভাবে নেয় না…সহজভাবে নিতো যদি এই পুলিশ বিভাগটি সবসময় আপনার সত্য এবং ন্যায় অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতো। কিন্তু সেটা তারা নেননি।”

‘‘ যেমন আবরার হত্যাকান্ডে নেননি, এমনি আরও অনেক ঘটনায় নেননি। আজকে পরবর্তিত পরিস্থিতি ফ্যাসিস্ট হাসিনা নেই… রক্তপাত হওয়ার কথা নয়। এই জানুয়ারি মাসেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল নাম এক যুবককে হত্যা করা হয়েছিল। কেনো ক্যাস্পাস হবে রক্তপাতের একটি জায়গা?”

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে সিরাজগঞ্জের কৃতি শিক্ষার্থী ছাত্র দলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে এই মানবন্ধন হয়।

‘ভিসি ছাত্র নেতাদের তুই-তোকারি করেছে’

রিজভী বলেন, ‘‘ ভাইস চ্যান্সেলন সাহেব আপনার কাছে বিচার চাইতে গিয়েছিলো ছাত্র দল নেতারা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাম্য মারা গেছে। আপনি বিরক্ত হযেছেন, আপনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, আপনি তুই-তোকারি করেছেন ছাত্র নেতাদেরকে। কেনো? আপনি শুনতে চান না।”

‘‘ কারণ সাম্য ছাত্র দল করে। আপনার(ভিসি) রাজনৈতিক চিন্তা-দর্শন কি আমরা জানি। আপনি পছন্দ করেন না যারা জাতীয়তাবাদীর পক্ষের ওখানে রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে যারা ছাত্র সংগঠন করে। আপনি ও আপনার প্রক্টোর দুই জনই একটি আদর্শে বিশ্বাস করেন।”

তিনি বলেন, ‘‘ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ যদি নদীর বালু চর দখল নেয় না সেই চর দখলের মতো যদি আপনারা কোনো গ্যাংয়ের প্রধান হন তাহলে ওটা তো বিশ্ববিদ্যালয় বলা যাবে না।আপনারাদের মাথায় যে দর্শন সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করছেন।বাংলাদেশে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অন্তবর্তীকালীন সরকার নিয়োগ দিয়েছে যারা এই কাজটি করছেন।তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, তারা যে দর্শনে বিশ্বাস করেন ওটা বাস্তবায়ন করা।”

‘‘কিন্তু আমরা যুগ যুগ ধরে দেখেছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর যে আদর্শে বিশ্বাস করুক ওটা তার ব্যক্তিগত… কিন্তু উনি যখন একটি প্রশাসনের প্রধান হন, উনি তো শিক্ষক… উনার কাছে প্রতিটি ছাত্র, প্রতিটি ছাত্র সংগঠণ সমান মর্যাদা পাবে।তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি রক্ষার জন্য সবার সাথে কথা বলবেন। কিন্তু উনি যদি নত হয়ে যান, উনি যদি তার বিশেষ দর্শন প্রতিষ্ঠিত করার কাজে নেমে যান তাহলে বিশ্ববিদ্যলয়ে কখনই শান্তিপুর্ণ হবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখানে কখনোই স্বস্তি বয়ে আনবে না।’’

‘ছাত্রদের যুমনা অভিমু্খ: দ্বিচারিতা কেনো’

রিজভী বলেন, ‘‘ অন্তবর্তীকালীন সরকার আমরা জানি না কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন? আপনারদেরকে আমরাও সমর্থন করেছি, এখনও করে যাচ্ছি। কিন্তু এই মিছিলটি যখন আপনাদের যুমনার দিকে যায়… প্রধান উপদেষ্টার বাসার দিকে তখন তাদেরকে সাদরে বরণ করেন। এই তিন-চার দিন আগেই দেখলাম, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে যারা গেলেন, তাদেরকে সাদরে বরণ করলেন।”

‘‘ আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা তাদের আবাসনের জন্য গেলে তাদেরকে আপনারা উপহার দিলেন লাঠিচার্জ, তাদেরকে উপহার দিলেন টিয়ার গ্যাস, তাদেরকে উপহার দিলেন সাউন্ড গ্রেনেড।আপনি অন্তবর্তীকালীন সরকা আপনারা বলছেন, আপনারা নাকি সবাই সুশীল সমাজ, আপনারা জ্ঞানী-গুনি ব্যক্তি। কিন্তু আপনাদের আচরণে মধ্যে এই দ্বিচারিতা কেনো? আপনাদের আচরণের মধ্যে এই বিভাজন কেনো?”

‘ডানে-বামে তাঁকিয়ে কাজ করুন’

অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, ‘‘ ডানে-বামে সব দিকে তাঁকিয়ে যথাযথভাবে দেশ শাসন করুন। নইলে কেউ রক্ষা পাবেন না। কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল বা কোনো আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে আপনাদেরকে কিন্তু জনগন ধরে ফেলবে।”

‘‘ আমরা পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, আমরা জমি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, আমরা টেরিটোরিয়েল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পার্শ্ববর্তী দেশের। আবার একই দিকে আমরা স্বাধীনতার পক্ষে, আমরা জাতীয় সঙ্গীতের পক্ষে, আমরা জাতীয় পতাকার পক্ষে, আমরা একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পক্ষে।”

এই মানববন্ধনে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনসহ উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরামের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *