নিজস্ব প্রতিবেদক
০৩-০৫-২৫
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ না দিলে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ‘বিপদে পড়তো না’ বলে মন্তব্য করেছেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
শনিবার সকালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশনে’র আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান সস্পর্কে এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ সে (সাকিব আল হাসান) আমার বাসায় আসলো… এক ফাঁকে তাকে একটা উপদেশ দিয়েছি যেটি সে গ্রহন না করে বিপদে পড়েছে। তাকে আমি বলেছি, যা করো না করো আওয়ামী লীগ কোনোদিন করবা না। তো এটা শুনে একটু বিমর্ষ হলো। তার ধারণা আওয়ামী লীগে গেলে মন্ত্রী হবে এটা হবে ওটা হবে.. এমপি তো হবেই।”
‘‘ আমি তাকে বললাম, আমিও তোমার মতো খেলোয়াড় ছিলাম… আমাদেরও পরিচিতি ছিলো… একসময় পাকিস্তান জাতীয় দলের একাই আমি বাঙালী ছিলাম। অনেক সুযোগ-সুবিধা নিতে পারতাম আমরা। কিন্তু খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় রাজনীতিতে যোগদান করা এটি আমার মন:পুত হচ্ছে না। তোমার অনেক নাম হয়েছে… কয়েক বছর ধরে বেস্ট অব দ্যা অনার । তুমি রাজনীতিতে যেয়ো না্ আর এই দলটি(আওয়ামী লীগ) বেশিদিন তার আয়ু নাই।সে চুপচাপ করে তারপরে খানিকক্ষন পরে চলে গেলো।”
হাফিজ বলেন, ‘‘ যদি সে আমার কথা শুনতো এবং এভাবে রাজনীতিতে না যেতো…এই ধরনের আমি-ডামি ইলেকশনে না যেতো আজকে সে অনেক সন্মানের সঙ্গে ঢাকার রাজপথে বিচরণ করতে পারতো।”
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া সাকিব গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশ ফিরতে পারছেন না।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল।
আশির দশকে রাজনীতিতে যোগ দেয়ার হাফিজ উদ্দিন আহমেদ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় ছিলেন। নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের কথা সাকিব আল হাসানকে মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি তাকে বললাম, আমিও তোমার মতো খেলোয়াড় ছিলাম… আমাদেরও পরিচিতি ছিলো… একসময় পাকিস্তান জাতীয় দলের একাই আমি বাঙালী ছিলাম। অনেক সুযোগ-সুবিধা নিতে পারতাম আমি।
‘‘ কিন্তু খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় রাজনীতিতে যোগদান করা এটি আমার মন:পুত হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘‘ এখানে(অনুষ্ঠানে) আরও যারা স্টার ক্রিকেটার, ফুটবলার, হকি প্লেয়ার আছেন… বিশেষ করে তামিম ইকবালকে বলব, তার যথেষ্ট নাম হয়েছে, তার স্টাইল অব ব্যাটিং আমার খুবই পছন্দ… এই ধরনের আক্রমনাত্মক প্লেয়ার আর তো দেখা যায় না।”
‘‘ তাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড হ্যান্ডেলিং করতে পারেনি।যার জন্য মানসিকভাবে খেলার আগে বিড়ম্বিত ছিলো… সময়ের আগেই কোন কোন ফরম্যাট থেকে রিটায়ার্ড করেছে।”
ক্রীড়াঙ্গনে আওয়ামী লীগের নেতিবাচক ভূমিকার সমালোচনা করে সাবেক মন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ আসলে এইসব ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোতে অনেক এক্সট্টাকাভার বিরক্ত করে। এক্সট্টাকাভার কি? এটাকে জোক হিসেবেও নিতে পারেন। ক্রিকেট খেলার সময়ে অনেক মহিলাও খেলা দেখতে আসেন.. ওল বুনেন আর খেলা দেখেন। এক মহিলা আরেক মহিলাকে বলছেন, আপা কেমেন্ট্রানরা বলছেন, এক্সট্টাকাভার, এক্সট্টাকাভার… এই জিনিসটা কি? যাকে জিজ্ঞাসা করা হলো সেই মহিলা বললেন, এই যে ক্রিকেটার ফজল মাহমুদ বল করতে আসলেন, বল করার আগে নিজের গায়ে খেকে সুয়েটারটা খুলে আম্পেয়ারকে দিলো এটাই এক্সট্টাকাভার।”
‘‘তো আওয়ামী লীগে এরকম ক্রিকেট বোর্ডে এক্সট্রাকাভার আছে যারা জানে না হাউ টু হেন্ডেল এ ক্রিকেটার, হাউ টু হেন্ডেল স্পোর্টস ম্যান যাদের অনেক ফেলোয়িং… যারা অল্প বয়সে অর্থ ও খ্যাতি অর্জন করার ফলে ইনব্যালেন্স হয়ে যেতে পারে …সেজন্য প্রত্যেক আউটস্টেন্ডিং পপ্যুলার খেলোয়াড়দের একজন এডভাইজার দরকার যে সবসময় তাকে লেভেল হেডেড রাখবে… তার মাথাটা যেন বিগরিয়ে না যায় এবং অল্প বয়সে অর্থের কারণে তার যেন বদঅভ্যাস গড়ে না ওঠে।”
তিনি বলেন, ‘‘ক্রীড়াঙ্গন একটি অন্য ধরনের অঙ্গন। রাজনীতি থেকে অনেক দূরের অঙ্গন। ক্রীড়াঙ্গনে যাঁরা রথী–মহারথী, যাঁরা সময় দেন, তাঁদের হৃদয় অন্য রকম, ব্যঞ্জনা অন্য রকম। মনমানসিকতা অন্য রকম। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ক্রীড়াবিদদের মনমানসিকতার অনেক তফাৎ রয়েছে। আমি কখনোই চিন্তা করি নাই রাজনীতি করব।”
জাতীয়তাবাদী ঘরানার ক্রীড়া সংগঠকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশন’ দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার দাবি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করল।
গত ১৯ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ভাইরাল হওয়া ছবি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ছবিটি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘‘ সাবেক কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা বিএনএম গঠন করে (দ্বাদশ নির্বাচনের আগে) আমাকে সেখানে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানায় এবং তারাই সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আসে।”
‘‘ সাকিব আমার কাছে এসে রাজনীতিতে যোগদানের ইচ্ছা জানায়। কিন্তু আমার কাছ থেকে উৎসাহ না পেয়ে সে চলে যায়।”
আওয়ামী লীগ ‘দলীয়করণ ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্রীড়া সংগঠন’ তৈরি করে ক্রীড়াঙ্গনকে কুলষিত করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে দেশের বাইরে আছেন সাকিব আল হাসান। এমনকি বিদায়ী টেস্ট খেলতেও দেশে আসতে পারেননি সাবেক এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বেশ কিছু মামলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির আবদুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, আমিনুল হক, শরীফুল আলম ও ইশরাক হোসেন বক্তব্য রাখেন।
জা ই / এনজি