রাত ৪:১৪ | বৃহস্পতিবার | ১লা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২রা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

সরকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগ চাইলেন শিক্ষকেরা

প্রতিবেদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩০ জুলাই ২০২৪

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আট দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করে বর্তমান সংকটের সমাধান করা, আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজত থেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর ও গ্রেপ্তার সব শিক্ষার্থীকে মুক্তি দেওয়াসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে সাদা দল। একই সঙ্গে বর্তমান সরকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগ দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের এ সংগঠন।

এই শিক্ষকেরা আরও বলেছেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। দেশে কোনো অরাজকতা-বিশৃঙ্খলা চান না তাঁরা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সাদা দলের শিক্ষকেরা এসব দাবি জানান। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রাণহানি ও উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে বক্তব্য জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাদা দলের আহ্বায়ক মো. লুৎফর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা দাবি উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে আছে, ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্র নামধারী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলা এবং পরে ক্যাম্পাসে সংঘটিত সব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগ; অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা ও কারফিউ পুরোপুরি প্রত্যাহার করে জনজীবন স্বাভাবিক করা।

শিক্ষকদের দাবির মধ্যে আরও আছে, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক তদন্তের ব্যবস্থা করে ১৬ জুলাই থেকে আন্দোলন দমনের নামে শিক্ষার্থীসহ কয়েক শ মানুষ হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত করে তাঁদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা এবং নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও আহত সবার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

অন্য দাবিগুলো হলো আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতিসাধনের ঘটনা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ ও নির্মোহ তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ডিবি হেফাজত থেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর ও গ্রেপ্তার সব শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া; শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার ও তাঁদের গ্রেপ্তার-হয়রানি না করা; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বশেষ আট দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করে সংকটের সমাধান করা; তদন্ত ছাড়াই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পেশাজীবীসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের গণগ্রেপ্তার-রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন বন্ধ করা ও গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া এবং সরকারের পদত্যাগ ও একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ‘জনগণের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা।

লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করা হয়েছে। কোনো তদন্ত ছাড়াই জনসম্পত্তি ধ্বংসের দায় সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপানো হয়েছে, বহু মামলায় অজ্ঞাতনামা হাজারো মানুষকে আসামি করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডের নামে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। গণগ্রেপ্তার থেকে বিরোধী মতের শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ অন্য পেশাজীবীরাও রেহাই পাচ্ছেন না। এ ছাড়া ব্লক রেইডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানা তৎপরতায় জনমনে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে ভয়ানক অবস্থা তৈরি হয়েছে, সেটিকে স্বাধীনতা–পরবর্তী বাংলাদেশে নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছে সাদা দল। সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, একটি যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সহিংস রূপ দিয়ে তা দমনের নামে কয়েক দিনে এত মানুষ হত্যার ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটেনি। নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ডিবি হেফাজতে নিয়ে তাঁদের দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এটিও নজিরবিহীন ঘটনা।

রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব হলেও সরকার এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে সাদা দল বলেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আক্রমণ থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। এর জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। দেড় দশক ধরে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠনের কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ছিল এরই প্রতিক্রিয়ায় পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে সরকার সমর্থক শিক্ষকদের দিয়ে পরিচালিত শিক্ষক সমিতি তার সংগ্রামী ও ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা পালন করতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেমন এগিয়ে আসেনি, তেমন শিক্ষক সমিতিও কোনো ভূমিকা রাখেনি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও আবদুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।

 

 

টিআই/ এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *