নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
নির্বাচন এবং সংস্কারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য ছাড়া সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
আজ রোববার সকালে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলটির মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
গতকাল ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে দলটির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিএনপির অঙ্গসহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
চারটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা নিয়ে বিএনপির প্রাথমিক মন্তব্য জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে এখনো মন্তব্য করতে চাইনি। কারণ, পুরো প্রতিবেদন আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। সরকার যেটা বলেছে এবং যে পরিকল্পনা করেছে, এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে, তারপরেই সিদ্ধান্ত হবে এবং ঐকমত্য ছাড়া কোনোটাই গ্রহণযোগ্য হবে না।
এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল বিএনপি জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছে, কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, এই দাবি অবাস্তব। এত দ্রুত বিচার ও সংস্কার সম্ভব নয়। এ প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা তো বরাবর এক কথা বলে এসেছি, সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। যে নির্বাচন হবে এবং যে সরকার আসবে, যে দল সরকারে আসবে, তারা এই সংস্কারগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে বলতে পারি, আমরা প্রতিটি সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপির মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমানের যদি জন্ম না হতো, তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কী অবস্থায় যেত, এটা আমরা জানি না। জিয়াউর রহমান একদিকে যেমন সৈনিক ছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাও ঘোষণা করেছিলেন। স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, একইভাবে ১৯৭৫ সালে সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তিনি (জিয়াউর রহমান) যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে এসেছিলেন, তিনি বাংলাদেশকে একটি আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য অতি অল্প সময়ে সব নতুন সংস্কার করে কাজ শুরু করেছিলেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশে যে সংস্কার, অর্থাৎ একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসনব্যবস্থায় নিয়ে আসেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, তিনিই (জিয়াউর রহমান) প্রথম বদ্ধ অর্থনীতিকে ভয়ংকর সমাজতান্ত্রিক চিন্তার যে অর্থনীতি ছিল, তার থেকে মুক্ত করে তিনি মুক্তবাজার অর্থনীতির একটা পরিকল্পনা চালু করেন। তার সময়েই কৃষিতে বিপ্লব হয়েছিল। এই মহান নেতা যে দল তৈরি করেছিলেন, সেই দল এত বছর পরও বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে দেশের সবচেয়ে বড় দলে পরিণত হয়েছে। তারই উত্তরসূরি খালেদা জিয়া দলকে আরও শক্তিশালী করেছেন। তিনি অসুস্থ অবস্থায় লন্ডনে আছেন। তার আরোগ্য লাভের জন্য দোয়া করছি।
সব মানুষের ঐক্য আরও দৃঢ় হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যে যেন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্রে ফিরে যেতে পারি, সেই ব্যবস্থা কায়েম হোক।
।পর এত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বরাবর এককথা বলে এসেছি যে, সংস্কার এবং নির্বাচনের মধ্যে কোনো বিেেরাধ নেই। সংস্কারও চলবে, নির্বাচন হবে এবং যে দল সরকারে আসবে তারা সংস্কারগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে পরিস্কার করে বলতে পারি যে, আমরা প্রতিটি সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলীতে তার জন্ম। দিবসটি পালনে বিএনপি সারাদেশে দিনব্যাপী আলোচনা সভা, কবিতা পাঠসহ নানা অনুষ্ঠান করেছে।
জা ই / এনজি