দুপুর ১:২২ | শনিবার | ২৪ মে, ২০২৫ | ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল | ২৫ জিলকদ, ১৪৪৬

ভার্টিগো চিকিৎসায় ওষুধ নয়, কারণ অনুসন্ধানেই মুক্তি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
১৯ মে ২০২৫

 

চক্রাকারে মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো বা দৃষ্টিভ্রম— এই উপসর্গগুলো ‘ভার্টিগো’ নামে পরিচিত। অথচ এই সমস্যার মূল কারণ শনাক্ত না করে প্রায়শই ভুল চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভার্টিগো মোকাবিলায় শুধু উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা নয়, বরং সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে এর মূল কারণ খুঁজে বের করাই সুস্থতার প্রধান চাবিকাঠি।

সোমবার (১৯ মে) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) এ-ব্লক অডিটোরিয়ামে ‘এপ্রোচ টু ভার্টিগো’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই বৈজ্ঞানিক আলোচনা সভায় নিউরোলজি, নাক-কান-গলা ও শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন, ভার্টিগো সমস্যায় শুধু ওষুধ খেয়ে মাথা ঘোরা থামানোই যথেষ্ট নয়। অন্তর্নিহিত কারণ না জেনে কেবল উপসর্গের চিকিৎসা করলে সমস্যা অমীমাংসিত থেকে যায়। তাদের মতে, ভার্টিগো কোনো স্বতন্ত্র রোগ নয়, বরং এটি অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার উপসর্গ। তাই এর চিকিৎসা শুরু করতে হলে প্রথমে মূল কারণ চিহ্নিত করতে হবে, কারণ না জেনে চিকিৎসা ফলপ্রসূ হয় না।

সেমিনারে নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এস কে মাহবুব আলম বলেন, ভার্টিগো হলে আগে দেখতে হবে এটি কেন হচ্ছে। কারণ না জেনে চিকিৎসা দিলে উপসর্গ শুধু চাপা থাকে, সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা যায় না।

তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা শুধু মাথা ঘোরা বন্ধ করতে চান। কিন্তু এর পেছনে স্নায়ু, কান, চোখ অথবা মস্তিষ্কের গঠনগত কোনো জটিলতা লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস নেওয়া, শারীরিক পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনে ইমেজিং টেস্টের মাধ্যমে সঠিক কারণ নির্ণয় করাই প্রাথমিক পদক্ষেপ।

সেমিনারে সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানু লাল সাহা বলেন, কানের ভেতরের সমস্যার (ইনার ইয়ার) ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়ামেই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে কিছু পরিস্থিতিতে অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হতে পারে।

তিনি আরও জানান, অনেক সময় ভার্টিগো ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের মতো স্বাস্থ্য সমস্যার সাথেও সম্পর্কিত হতে পারে। তাই সাধারণ মাথা ঘোরার ওষুধ না দিয়ে রোগীর শারীরিক অবস্থা বুঝে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করা জরুরি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন, ভার্টিগো মূলত নিউরোলজি ও ইএনটি বিশেষজ্ঞদের যৌথ ক্ষেত্র। সুতরাং, এর সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য তাদের সমন্বিতভাবে কাজ করা অপরিহার্য।

অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছার সভাপতিত্বে এবং ডা. খালেদ মাহবুব মোর্শেদ (মামুন)-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমানসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে যে মাথা ঘোরা মানেই একটি ওষুধ খেলেই সেরে যাবে। কারণের ভিত্তিতে চিকিৎসা দিলেই রোগী দ্রুত সুস্থ হতে পারবে।

সেমিনারে ভার্টিগোর উপসর্গ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়। বলা হয়, ভার্টিগো শুধু মাথা ঘোরা নয়; রোগীর মনে হয় তার চারপাশ ঘুরছে অথবা সে নিজেই ঘুরছে। এর ফলে ভারসাম্যহীনতা, বমি বমি ভাব, হাঁটতে অসুবিধা এবং পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

ভার্টিগোর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন— কানের ভেতরের সমস্যা (ইনার ইয়ার), মস্তিষ্কের সংযোগস্থলে সমস্যা, চোখের সমস্যা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, স্নায়বিক অসামঞ্জস্য এবং হৃদরোগ বা হরমোনজনিত সমস্যা

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ভার্টিগোকে একটি স্বতন্ত্র রোগ হিসেবে না দেখে এটি যে অন্তর্নিহিত সমস্যার সংকেত দিচ্ছে, সেটি খুঁজে বের করাই চিকিৎসার প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপ।

সেমিনার শেষে অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, এই ধরনের বৈজ্ঞানিক আলোচনা শুধু চিকিৎসকদের নয়, সাধারণ মানুষের মাঝেও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করবে।

 

 

জ উ / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *