ভোর ৫:২৭ | শনিবার | ২৪ মে, ২০২৫ | ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল | ২৫ জিলকদ, ১৪৪৬

বিশ্ব ফিস্টুলা দিবস আজ : প্রতিরোধযোগ্য নীরব মহামারির অবসান হোক

এনজি  ডেস্ক
২৩ মে ২০২৫

আজ শুক্রবার (২৩ মে) পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অবস্টেট্রিক ফিস্টুলা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

অবস্টেট্রিক ফিস্টুলা হলো প্রসবকালীন জটিলতার কারণে সৃষ্ট একটি গুরুতর শারীরিক অবস্থা, যেখানে দীর্ঘস্থায়ী ও বাধাগ্রস্ত প্রসবের ফলে মূত্রাশয় বা মলদ্বার এবং যোনির মধ্যে একটি গর্ত তৈরি হয়। এর ফলে আক্রান্ত নারী অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রস্রাব বা মলত্যাগে ভোগেন, যা কেবল শারীরিক নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিকভাবেও তাদের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।

ফিস্টুলায় আক্রান্ত নারীরা প্রায়শই পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, যা তাদের গভীর হতাশা ও নিঃসঙ্গতার দিকে ঠেলে দেয়।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল এই সমস্যা দূরীকরণে বিশ্বব্যাপী অ্যান্ড ফিস্টুলা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। সংস্থাটি ফিস্টুলাকে একটি সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য ও নিরাময়যোগ্য অবস্থা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রয়োজনীয় প্রসবকালীন স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষ করে দক্ষ ধাত্রী বা স্বাস্থ্যকর্মীর উপস্থিতি এবং জরুরি সিজারিয়ান সেবার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ফিস্টুলা প্রতিরোধ করা সম্ভব। একবার ফিস্টুলা হয়ে গেলে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এটি সফলভাবে নিরাময় করা যায়।

এই দিবসের উদ্দেশ্য হলো ফিস্টুলা প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা, নারী স্বাস্থ্য অধিকারের প্রতি সমর্থন জানানো এবং ফিস্টুলায় আক্রান্ত নারীদের সমাজে পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।

দিবসটি উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সবার প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে, যেন এই নীরব মহামারীতে আক্রান্ত নারীদের পাশে দাঁড়ানো হয় এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন বাড়ানো হয়, যাতে তারা সুস্থ জীবন ফিরে পেতে পারেন এবং সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসতে পারেন।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রসবজনিত কারণে মারা যান ১৪ জন নারী। আর এই ১৪ জন নারীর মধ্যে শতকরা ৮ ভাগ নারীর মৃত্যু হয় বাধাগ্রস্ত বা বিলম্বিত প্রসবের কারণে। তবে বাংলাদেশে ফিস্টুলা রোগীর সংখ্যা কত- এ নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যান নেই।

ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব অবস্টেট্রিক ফিস্টুলা সার্জন্সের (আইএসওএফএস) তথ্য মতে, ২০২৪ সালে দেশে ফিস্টুলা আক্রান্ত নারীর অনুমিত সংখ্যা ১৭ হাজার ৪৫৭ জন। এর মধ্যে অস্ত্রোপচার হয়েছে ৩ হাজার ১০৯ জনের। অর্থাৎ ৮২ শতাংশ নারী চিকিৎসার আওতার বাইরে আছেন।

যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আনুমানিক ১ লাখ ২০ হাজার নারী প্রসবজনিত ফিস্টুলায় ভুগছেন। প্রতি এক হাজার বিবাহিত নারীর মধ্যে ১ দশমিক ৬৯ জন প্রসবজনিত ফিস্টুলায় আক্রান্ত।

জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জাতীয় ফিস্টুলা সেন্টারসহ দেশের ১১টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিনামূল্যে ফিস্টুলা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২২-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রসবজনিত ফিস্টুলা রোগীর মধ্যে ৮৯ দশমিক ৪ শতাংশ প্রসূতি ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সে প্রথম প্রসব করেছিলেন। ফিস্টুলা রোগীদের মধ্যে ৩০ দশমিক ৪ শতাংশের বয়স ছিল ৪০ থেকে ৪৯ বছর, ৫০ বছরের বেশি ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ, ২৬ দশমিক ১ শতাংশের বয়স ৩০ থেকে ৩৯ বছর, ৮ দশমিক ৭ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ২৯ বছর। এসব রোগীর ৭৯ দশমিক ৩ শতাংশের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। দেশের ১৮টি হাসপাতালে ভর্তি ৭১৯ জন ফিস্টুলা রোগীর ওপর চালানো এই গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে গড়ে ১৮ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর এসব রোগীর ৭০ শতাংশ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

এ ছাড়াও জরিপে দেখা যায়, দেশে প্রসবজনিত (বাধাগ্রস্ত প্রসব) কারণে ফিস্টুলায় আক্রান্তদের হার ৫৭ শতাংশ। আর জরায়ু অপসারণ করতে যে অস্ত্রোপচার হয়, সে ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ এবং অস্ত্রোপচারে সন্তান প্রসবের পরবর্তী আঘাতের কারণে ফিস্টুলায় আক্রান্ত হন ৪০ শতাংশ নারী।

 

 

জ উ / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *