বিকাল ৩:৩৮ | শনিবার | ২৪ মে, ২০২৫ | ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল | ২৫ জিলকদ, ১৪৪৬

বিশ্বরেকর্ড গড়ে শাকিলের এভারেস্ট জয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ মে ২০২৫

 

এভারেস্ট বিশ্বের অনেক পর্বতারোহীই জয় করেছেন, জয় করেন, করবেন। নিজ দেশের পক্ষে হয়তো রেকর্ডও গড়েন, গড়বেন। তবে ইকরামুল হাসান শাকিল যেটা করেছেন সেটা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের কেউ আগে করে দেখাতে পারেননি এত কম বয়সে।

‘সি টু সামিট’ শীর্ষক শাকিলের এবারের অভিযান ছিল পদযাত্রা করে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দিয়ে সবচেয়ে কম সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এভারেস্ট জয়ের বিশ্বরেকর্ড। শাকিল যা করে দেখিয়েছেন সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে।

সোমবার (১৯ মে) এই অভিযানের সমন্বয়ক বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের (বিএমটিসি) সদস্য সাদিয়া সুলতানা শম্পা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্বরেকর্ড গড়ে শাকিলের এভারেস্ট জয়

তিনি জানান, শাকিল বিশ্বরেকর্ড করে এভারেস্ট আরোহণ করে ক্যাম্প ৪-এ ফিরেছেন। উনি দ্রুততম সময়ে সমুদ্র থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করে ১৩শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এই শিখর আরোহণ করেন। ইন্টারনেট ও ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বিধায় আজ সকালে ঠিক কয়টার সময় আরোহণ করেছেন, সঙ্গে কয়জন ছিলেন এবং সেখানকার ছবি ও ভিডিও আমাদের হাতে এখনো এসে পৌঁছায়নি। এভারেস্টের সেই কোম্পানি আমাদের এটুকু কনফার্ম করেছেন।

আশা করা যায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এগুলো সব আপনাদের জানানো হবে। তবে তার চেয়েও জরুরি শাকিলের সম্পূর্ণ নিরাপদে বেসক্যাম্পে ফিরে আসা। আগ্রহীরা Ikramul Hasan Shakil – ইকরামুল হাসান শাকিল এই পেজে আপডেট পাবেন। তবে আমাদের এখনো ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশের স্বপ্নবাজ এ তরুণের আগে ১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপ ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে ৯৬ দিনে প্রায় ১২শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পদচিহ্ন রাখেন। শাকিল তার যে সপ্তাহখানেক কম সময়ে পাড়ি দিয়েছেন আরও একশ কিলোমিটার বেশি।

সপ্তম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন শাকিল। এর আগে আরও ছয়জন বাংলাদেশির পা পড়েছে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায়। তারা হচ্ছেন মুসা ইব্রাহীম, এম এ মুহিত, নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া নাজরীন, খালেদ হোসেন ও বাবর আলী।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের ইনানি সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু হয় শাকিলের পদযাত্রা। ৯০ দিনের মধ্যে ‘সি টু সামিট’ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে অভিযান শুরু করেন তিনি। যাত্রাপথে বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের প্রায় এক হাজার ৩শ কিলোমিটার দীর্ঘ ও দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এভারেস্টের ২৯ হাজার ৩১ ফুট উঁচু শিখরে আরোহণ করলেন শাকিল।

বিশ্বরেকর্ড গড়ে শাকিলের এভারেস্ট জয়

প্লাস্টিক দূষণ বিষয়ে জনসচেনতা, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং পরিবেশ রক্ষায় টেকসই সমাধানের গুরুত্ব তুলে ধরতে এ অভিযান শুরু করেন এই পর্বতারোহী। এর আগে শাকিল প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে গ্রেট হিমালয়ান ট্রেইল সফলভাবে সম্পন্ন করেন। যা বিশ্বের ৩৩ জন পর্বতারোহী এখন পর্যন্ত সম্পন্ন করতে পেরেছেন।

এর আগে ২০১৩ সালে তিনি কলকাতা থেকে হেঁটে ১১ দিনে ঢাকায় পৌঁছান। তখনই যোগ দেন বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাবে। পর্বতারোহণের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেন ভারত থেকে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো ২০ হাজার ২৯০ ফুট উচ্চতার কেয়াজো-রি পর্বতশৃঙ্গ জয় করতে যান এম এ মুহিতের নেতৃত্বে সাত পর্বতারোহী। তাদের একজন শাকিল।

শেষ পর্যন্ত মুহিত, শাকিল ও কাজী বাহলুল শৃঙ্গটি জয় করেন। ২০১৭ সালে লারকে পিক জয়ের অভিযানেও ছিলেন তিনি। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে খুব কাছাকাছি গিয়ে তা জয় করা হয়নি। পরের বছর ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেইনিয়ারিং থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণের সময়েই তিনি জয় করেন ‘দ্রৌপদী-কা-ডান্ডা-২’ শৃঙ্গ। ২০১৯ সালে বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশের আট পর্বতারোহী ‘হিমলুং’ জয়ের অভিযানে নামেন। সেই দলে অংশ নিয়ে তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হিমলুং-এর চূড়ায় পা রাখেন।

বিশ্বরেকর্ড গড়ে শাকিলের এভারেস্ট জয়

‘সি টু সামিট’ অভিযানের আয়োজক বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব। টাইটেল স্পন্সর দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ প্রাণ। সহযোগী স্পন্সর হিসেবে রয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), স্ন্যাকস পার্টনার মিস্টার নুডলস, গিয়ার পার্টনার মাকলু-ই-ট্রেডার্স নেপাল ও ওরাল হেলথ সিস্টেমা টুথব্রাশ, নিউজ পার্টনার জাগো নিউজ ও রেডিও পার্টনার জাগো এফএম।

 

 

 

টি আই/ এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *