বিকাল ৪:৪১ | বুধবার | ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ১লা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

বিডিআর হত্যাকান্ডে শেখ হাসিনাসহ আ’লীগের শীর্ষ নেতারা জড়িত : মেজর হাফিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৩ সেপ্টম্বর ২০২৪

বিডিআর হত্যাকান্ডে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেনা প্রধানসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। তিনি বলেন, এই হত্যাকান্ডে শেখ হাসিনা, সাবেক সেনা প্রধান মঈন উ আহমেদ, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলে নূর তাপস, নুর-ই আলম চৌধুরী লিটন, শেখ সেলিম, শেখ হেলাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, হাসানুল হক ইনু, সাহারা খাতুনসহ আরো অনেক নেত্বৃৃন্দ এবং শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট আত্বীয়স্বজন জড়িত। তিনি তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) হত্যাকান্ডের ঘটনার পুণঃতদন্তে ‘আসল রহস্য’ উন্মোচিত হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

বিডিআর হত্যাকান্ডের পূণঃতদন্ত হওয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর ঘোষণা পরদিন আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এ্ক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মেজর হাফিজ বলেন, বিডিআর হত্যাকান্ডের ঘটনা হৃদয় বিদারক ঘটনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও সুদূর প্রসারি কার্যক্রম রয়েছে। যাতে করে এই দেশটা একটা পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়। একইসাথে দেশে কোনো শক্তিশালী সেনা বাহিনী না থাকে। এই পুণঃতদন্তে সেই রহস্য উন্মোচিত হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
সাবেক এ সেনা কর্মসর্তা বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কয়েকজন অফিসার মিলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলাম। আমাদের সৃষ্ট এই সেনাবাহিনী জনগনের আশা-আকাংখাকে ধারণ করেছিলো প্রত্যেকটি আন্দোলনে-সংগ্রামে জনগনের সাথী হয়ে জনগনের আশা-আকাংখার প্রতিফলন ঘটিয়েছিলো। কিন্তু সেই সেনাবাহিনীকে ধবংস করার জন্যই প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো এই বিডিআর হত্যাকান্ড। আমরা আশা করব, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্মোহভাবে নিরপেক্ষভাবে এই ঘটনার তদন্ত করবেন এবং বিচারের কাজ দ্রুত শুরু করবেন।

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে নারকীয় হত্যাকান্ড ঘটনায় তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তা ও আরও ১৭ জন পরিবারের নারী ও শিশুসহ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, ওই বিডিআর হত্যাকান্ডের ঘটনায় অনেক নিরহ ব্যক্তিকে দন্ডিত করা হয়েছে, অনেক দোষী ব্যক্তি শাস্তির আওতার বাইরে চলে গিয়েছে। তবু আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি তারা বিএনপির অনুরোধে এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার রহস্য উন্মোচনের জন্য উদ্যোগ গ্রহন করেছেন এবং এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যত পথপরিক্রমার জন্য অত্যন্ত জরুরী।তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য যে সকল দেশ এবং প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দালাল হিসেবে অপকর্মের লিপ্ত ছিলো, তাদের সকলের চেহারা উন্মোচিত হোক জনগনের স্বার্থে। আমরা একটা নতুন যাত্রা শুরু করতে চাই। আমাদের দল থেকে ইতিমধ্যে বলা হয়েছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সবধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করব।

তিনি বলেন, অতিঅল্প সময়ের মধ্যে এই নারকীয় বিডিআর হত্যাকান্ডের একটা সুষ্ঠু পরিণতি দেখতে চাই, বিচার চাই যাতে করে আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারসমূহের অন্তর শান্ত হয়। আমরা দেখতে চাই, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেভাবে পুণঃতদন্ত ও পুণঃবিচারের উদ্যোগ গ্রহন করেছে এটি যাতে সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। আমরা বিএনপির তরফ থেকে তাদেরকে সর্বত্রভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করব।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজ বলেন, আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে এবং সাধারণ নাগরিকরাও বর্তমান সামরিক বাহিনীর কর্মকান্ড ক্লোজড মনিটরিং করছি। এখন পর্যন্ত যে সমস্ত কর্মকান্ড পরিচালিত হয়েছে বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে শেষ মুহুর্তে দ্রুত সরকার থেকে বাইরে নিক্ষেপ করার জন্যে এবং ছাত্র-জনতার বিপ্লবে পূর্ণাঙ্গ সহায়তা করার জন্যে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান এবং সেনা বাহিনী এবং সামরিক বাহিনীর সকল সদস্যদেরকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
পূণঃতদন্তের কোনো সময়মীমা বিএনপি দেবে কিনা প্রশ্ন করা হলে হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমরা প্রয়োজনীয় সময় দিতে চাই এই তদন্ত কমিটিকে। আমরা আশা করি দ্রুত তারা তদন্ত কাজ এবং বিচারের কাজ সম্পন্ন করবে। সময়সীমা বেধে দেয়া অত্যন্তু মুশকিল।

হাফিজ বলেন, এই ঘটনায় সরকারের এবং বিদেশী শক্তির সংশ্লিষ্টতা ছিলো কিনা এই সম্পর্কে সব কিছু এখনো ধঁয়াশাই রয়ে গিয়েছে। এই সম্পর্কে আমরা ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি পত্র হস্তান্তর করি। সেখানে অনুরোধ করা হয় যে, এই নারকীয় হত্যাকান্ডের নতুনভাবে তদন্ত করে পুণঃবিচার করতে হবে। এর সাথে কারা কারা সংশ্লিষ্ট বিদেশী হস্তক্ষেপ আছে কিনা? কি কারণে এই নারকীয় হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিলো এব্যাপারে কমিশন গঠনের জন্য আমাদের দলের মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। আমরা খুব আনন্দিত যে, অতিঅল্প সময়ের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সম্মতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই নারকীয় হত্যাকান্ডের পুণঃতদন্ত ও পুণঃবিচারের কাজ শুরু করার উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। সেজন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর মেধাবী ৫৭ কর্মকর্তা ও বেসামরিক ১৭ জন লোককে হত্যা করা হয়। পিলখানার অভ্যন্তর থেকে ৩৮ জন সেনা কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নির্মোহ ও উন্মুক্ত তদন্ত হলে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে ।

এই পিলখানা ঘটনার প্রধান কারণ কি ছিলো তার ব্যাখ্যা দিয়ে মেজর হাফিজ বলেন, সেনাবাহিনীর মেরুদন্ড ভেঙে দেবার জন্য, বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ অকার্যকর, নতজানু রাষ্ট্রের পরিণত করার জন্যই এই হত্যাকান্ড সংঘটিত করা হয়েছিলো। বেশ কিছু ব্যক্তির সুপরিকল্পিতভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মদদে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে জনগনের বিশ্বাস রয়েছে।
বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনায় সেনা বাহিনীর তরফ থেকে তৎকালীন কোয়াটার মাস্টার জেনারেল বর্তমানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ‘আলোর মুখ’ দেখেনি বলেও মন্তব্য করেন হাফিজ।

তদন্ত কমিটি গঠন প্রসঙ্গে হাফিজ বলেন, বিডিআর হত্যাকান্ডের ঘটনার বিষয়ে আমরা একটা চিঠি সরকারকে দিয়েছিলাম। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পূণঃতদন্তের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা সন্তষ্ট যে তারা দ্রুত এ ব্যাপারে অগ্রসর হয়েছেন। আমরা আমাদের চিঠিতে একটি তদন্ত কমিশন স্থাপনের করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। একটা কমিশন যদি তারা করে এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করে তাহলে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা আশা করি।

 

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা তদন্ত কমিশনের জন্য অনুরোধ করেছিলা। যদি সরকার মনে করে যে, এখন যে পুণঃতদন্ত ও পুণঃবিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তার পাশাপাশি যদি সরকার মনে করে যে একটা কমিশন গঠন করবেন, সেই কমিশনে অনেকের অনেক কিছু বলার থাকবে, যেটা আগে বলতে পারেনি।

 

সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা.এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহ, অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম শামসুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

জা ই / এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *