ফেসবুকে ডা. জাহাঙ্গীর কবির নামের শত শত পেজ। অনেকগুলোতে কৌশলে ব্লু-ব্যাজ পাওয়া (ভেরিফায়েড) আইডির প্রোফাইল পিক ব্যবহার করা হয়েছে। নকল এসব পেজে ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের কণ্ঠ কপি (নকল) করে বৈধ-অবৈধ ওষুধের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এমনকি, যৌন উত্তেজক ওষুধেরও বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এসব নিয়ে বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়েছেন চিকিৎসক জাহাঙ্গীর কবির।
এ কারণে সম্প্রতি ডা. জাহাঙ্গীর কবির ও ডা. তাসনিম জারাকে অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগে ব্যবস্থা নিতে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী। পরে বুঝতে পেরে নোটিশ পৌঁছানোর আগেই প্রত্যাহার করেন ওই আইনজীবী। এ নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেও ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের প্রকৃত ও ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ডাউন করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) এ নিয়ে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ডা. জাহাঙ্গীর কবির। তিনি বলেন, ‘আমার নামে অসাধু চক্র অসংখ্য পেজ খুলে অবৈধ ওষুধ বিক্রি করছে। আমার ভেরিফায়েড পেজটা বন্ধ করে দেওয়ায় সবাইকে সতর্কও করতে পারছি না। তারপরও নিজের ফেসবুক আইডি ও ইউটিউব চ্যানেলে সতর্ক করেছি। থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। কেউ যেন সরল বিশ্বাসে প্রতারণার শিকার না হন। আপনাদের (গণমাধ্যমের) মাধ্যমেও জানাচ্ছি, আমি কোনো ওষুধ বিক্রি করি না। আমি মূলত, ওষুধমুক্ত সুস্থতার দিকে মানুষকে আহ্বান করি। আমাদের লাখ লাখ ডায়াবেটিস রোগী রোগমুক্ত হয়েছে লাইফস্টাইল ফলো করে।
ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, এ লাইফস্টাইলের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাবার, রোজা, মানসিক প্রশান্তি ও ঘুম ইত্যাদি আছে। অনেকে মনে করেন, আমরা ওষুধের বিরুদ্ধে। আসলে তা নয়। আমরা চাই যে, আমাদের একটা অপশন থাকুক- আমরা যারা ওষুধ থেকে মুক্তি পাচ্ছি না, তাদের জন্য ওষুধ থেকে বাঁচার উপায় যেন থাকে। শুধু লাইফস্টাইল ফলো করে ৬০-৭০টি রোগ থেকে সুস্থ থাকা যায়। আমরা এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ সব ধরনের সেবা দিই। শুধু টেস্ট ও নানান ধরনের ফুড টাকা দিয়ে কিনতে হয়। আমরা বলছি, ফুড ইজ মেডিসিন। তবে খাবারটা হতে হবে কেমিক্যালমুক্ত।
তিনি বলেন, আমাদের দিকনির্দেশনা যারা মানছেন, তারা রোগমুক্ত হয়েছেন। এ কারণে অনেকে আমাদের ভালোবাসে। আমাদের ওপর আস্থা আছে। এ আস্থা পুঁজি করে আমাদের নাম ব্যবহার করে বিশাল চক্র প্রতারণা করছে। বহু রকম ওষুধ বিক্রি করছে। এর মধ্যে আছে, ডায়াবেটিকস কমানো, যৌন উত্তেজক, ওজন কমানোর ওষুধ। এমনকি অ্যালার্জি, পাইলস ও অ্যাজমার ওষুধও বিক্রি করছে। নানানভাবে তারা এ কাজ করছে। আমরা যদি সচেতন না হই তাহলে তারা আরও দ্বিগুণ তিনগুণ উৎসাহিত হবে এবং এ প্রতারণা বাড়তেই থাকবে।
আমার স্পষ্ট বক্তব্য- ডা. জাহাঙ্গীর কবির কোনো ধরনের ওষুধ বিক্রি করে না। আমাদের কিছু সুপার ফুড আছে। যেমন- ব্লাক রাইস, কিনোয়া, নারকেলের তেল, ঘি, সরিষার তেল, মাকা কাকাও, হুয়ানারপো মাচোও, অর্গানিক হলুদ, বেকিং সোডা, অর্গানিক কোকোনাট, আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার, অর্গানিক কফি বিন, অর্গানিক স্পিরুলিনা পাউডার, অলিভ অয়েল, চিয়া সিড, গ্রিন টি, ম্যাকাডেমিয়া নাট, ওয়াল নাট, পেকান নাট, কাঠ বাদাম, পেস্তা বাদাম, বাকহুইট, ওটস, এমিনোস ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলন শেষে ডা. জাহাঙ্গীর কবির তার ল্যাব, চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের চেম্বার, ব্যায়ামাগার, জিম, ফুড এরিনা এবং সুপার ও ফাংশনাল ফুড বিক্রির আউটলেট ঘুরে দেখান। তার পুরো প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে চারশ লোক কাজ করেন।
এসময় সাংবাদিকদের সামনে কয়েকজন রোগীর সঙ্গেও তাৎক্ষণিক কথা বলেন তিনি। চট্টগ্রাম থেকে আসা মিনহাজ জানিয়েছেন, তিনি এখানে তিনদিন হয় এসেছেন। হাই-প্রেশার নিয়ে এসেছেন। ওষুধ ছাড়াই প্রেশার নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
তিনি বলেন, এ সেবা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এরকম সেবা আমাদের দেশে ছিল না। খুঁজলেও পাবেন না। আমি শুধু সন্তুষ্ট নই, অভিভূতও।
আব্দুল গফুর সরকার বলেন, আমি এখান থেকে সেবা পেয়ে খুব খুশি। আমি ওজন বেশি নিয়ে আসছিলাম। তাকে নিয়ম মানতে বলেছে। কিছু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে বলেছে। প্রথম দিনে ৬২ কেজি ছিল। দুইদিন নিয়ম মেনেই তার ওজন কমেছে ২ কেজি। তবে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে পারেননি। আজ থেকে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করবেন তিনি।
জা ই / এনজি