রাত ৪:০৬ | বৃহস্পতিবার | ১লা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২রা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

পুলিশ ও সাধারণ মানুষ কোনো হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন না: ওবায়দুল কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি
২৬ জুলাই ২০২৪

 

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় নিরীহ মানুষ হত্যার দায় বিএনপি-জামায়াতের বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পুলিশ ও সাধারণ মানুষ কোনো হত্যায় অংশ নিতে পারেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ–ও জানান, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতির পেক্ষাপটে ছয় দিন নীরব থাকার পর আজ সংবাদ সম্মেলন করলেন তিনি।

গত কয়েক দিনের সহিংসতায় কতজন মারা গেছেন, সে সংখ্যা আছে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা মৃত্যুর তালিকা…পত্রপত্রিকায় দুই শর মতো বা দুই শর চেয়ে একটু বেশি। আমরা এটার খোঁজখবর নিচ্ছি। অনেক জায়গায়…জাহাঙ্গীরের (গাজীপুরের সাবেক মেয়র) সঙ্গে জুয়েল নামের একটি ছেলে সব সময় থাকত, তাঁকে উত্তরায় মেরে লাশ লটকিয়ে রাখা হয়। কী বর্বর! নৃশংসতা। পুলিশকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেক নিরীহ মানুষ মারা গেছেন। জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্যপট দেখতে ছিল…বাচ্চা যখন তাকাল, সেই বাচ্চা গুলি খেয়ে মারা গেল। তারপরে এ ধরনের ঘটনা আরও অনেক ঘটেছে। রাস্তায় বেরিয়েছে, নিষ্পাপ, নির্বোধ শিশু, কিছুক্ষণ পর দেখা গেল সে–ও লাশ হয়ে পড়ে ছিল। এ রকম ঘটনা অনেক আছে। এগুলো জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। সাংবাদিকেরাও নিচ্ছেন। সব সত্য বেরিয়ে আসবে।’

আপনি বলেছেন অনেকেই রাস্তায় বের হয়ে, জানালা দিয়ে দেখার সময় গুলি খেয়ে মারা গেছে। এগুলোর বেশির ভাগই গানশটে মারা গেছে। তাহলে আপনি কি বলেছেন জামায়াত-শিবিরের হাতে অস্ত্র ছিল। সেটা কি উদ্ধার করেছেন। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, জামায়াত-শিবিরের হাতে অস্ত্র ছিল। কিছু অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এখনো চলছে (উদ্ধার অভিযান)। উদ্ধার হবেই। তাদের নির্দেশদাতা ও হোতারা কিন্তু গ্রেপ্তার হয়েছে। রিমান্ডে আছে। অনেক সত্য বেরিয়ে আসবে।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা তো রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করছি। প্রশাসনিকভাবে মোকাবিলা করছি। আপনাদেরও আমরা সহযোগিতা চাই। এ অপশক্তি সবারই শত্রু। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলব।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, একাত্তর, পঁচাত্তর, ৩ নভেম্বর, ২১ আগস্টের খুনি এবং ২০১৩, ১৪, ১৫ সাল ও সর্বশেষ ২০২৪ সালে একই বিশ্বাসঘাতক, একই খুনি—তারা হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রদল, শিবির, উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠীর সুইসাইড স্কোয়াড অনুপ্রবেশ করে সারা দেশে পাকিস্তানি কায়দায় তাণ্ডব চালিয়েছে। আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীদের হত্যা করে সরকারের ওপর দায় চাপিয়েছে।

কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী দেশবিরোধী ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে না বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও সাধারণ মানুষ কোনো হত্যায় অংশ নিতে পারেন না। আমরা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু সমর্থন করি না। প্রতিটি হত্যার বিচারবিভাগীয় তদন্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী এ কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে যখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রে নৈরাজ্য-নাশকতার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। নির্দেশদাতা ও অর্থদাতাদের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। মির্জা ফখরুলের থলের বিড়াল বের হতে শুরু করছে, তখন তিনি আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি করছেন। তাঁরা সব সময় জনগণের আস্থা না রেখে বিদেশি প্রভুদের ওপর ভর করে রাজনীতি করেন। এ ক্ষেত্রেও তাঁদের সন্ত্রাসী চরিত্র উন্মোচিত হওয়া থেকে দায়মুক্তির জন্য বিদেশি হস্তক্ষেপের দাবি করছেন।

বিএনপি-জামায়াত-উগ্র বামপন্থী-জঙ্গিগোষ্ঠী কুচক্রী মহল এখনো সক্রিয় আছে বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘তাদের প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে প্রস্তুত হচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর আছে। তারা আবারও বিভিন্নভাবে হামলা চালাতে পারে। দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান, যেখানে অস্ত্রধারী ক্যাডারদের খোঁজ পাবেন, তাঁদের তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে সহযোগিতা করবেন।’

নেতা–কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল-শিবির, জঙ্গিগোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা আর যাতে সহিংসতা ছড়াতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। নেতা–কর্মীদের কারফিউ মেনে চলার অনুরোধ করেন কাদের।

‘এরা দেশের ধ্বংস চায়’ এই শিরোনামে আওয়ামী লীগ সারা দেশে লিফলেট বিতরণ করবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা হিসাবে সম্প্রতিক ঘটা ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগ গত চার দিন মূল্যায়ন সভা করেছে বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘গত চার দিনে আমরা যে বৈঠকগুলো করেছি, কোথাও কি হাতাহাতি, মারামারি হয়েছে? তর্ক-বিতর্ক গণতন্ত্রের প্রাণ। আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা করে। এখানে বিতর্ক হতেই পারে। যেকোনো বিষয়ে তর্ক হতেই পারে। কিন্তু কেউ তো মারামারি করেনি। কোনো হাতাহাতি হয়নি।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানসিকতাকে ধারণ করে বলে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের তাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা কোনোভাবেই সফল হবে না। আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে আছি। অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানাব, কেউ যাতে আপনার সন্তানকে ভুল পথে ধাবিত করতে না পারে, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। অশুভ শক্তির কাছে স্বাধীন বাংলাদেশ পরাজিত হতে পারে না।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।

 

টি আই /এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *