সন্ধ্যা ৬:৫৭ | শনিবার | ২৪ মে, ২০২৫ | ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল | ২৫ জিলকদ, ১৪৪৬

পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি : ভারতে গ্রেপ্তার ৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৯ মে ২০২৫

 

পাকিস্তানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারের অভিযোগে পেহেলগামে হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ। এরা হলেন জ্যেতি মালহোত্রা, দেবেন্দ্র সিং, নুমান ইলাহি, আরমান, তারিফ, শাহজাদ, মুহম্মদ আলী মুর্তজা, গাজালা মাহমুদ এবং ইয়ামিন মাহমুদ।

গ্রেপ্তার গ্রেপ্তারদের মধ্যে ৫ জন হরিয়ানা, ৩ জন পাঞ্জাব এবং একজন উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। এদের কেউ ট্রাভেল ভ্লগার, কেউ নৈশ প্রহরী, কেউ শিক্ষার্থী আবার কেউ বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

যেমন, জ্যোতি মালহোত্রা একজন ট্রাভেল ভ্লগার। ৩৩ বছর বয়সী এই ভ্লগারের বিরুদ্ধে অভিযোগ— পেহেলগামে হামলার আগ পর্যন্ত তিনি ভারতের পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং ভারতের সামরিক বাহিনীর কিছু তথ্য তিনি হোয়াটসঅ্যাপ ওই কর্মকর্তার সঙ্গে শেয়ার করেছেন।

২৫ বছর বয়সী দেবেন্দ্র সিং ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের পাতিয়ালা জেলার খালসা কলেজের শিক্ষার্থী। গত ১২ মে হরিয়ানার কাইথাল শহর থেকে গ্রেপ্তার হননি। দেবেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে অভিযোগ— তিনি পাকিস্তানের পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তিনি পাতিয়ালা সেনানিবাসের একাধিক ছবি আইএসআইয়ের সঙ্গে শেয়ার করেছেন।

হরিয়ানার পানিপথ শহরে নৈশ প্রহরী হিসেবে কর্মরত নোমান ইলাহির বিরুদ্ধেও আইএসআই সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। নোমানের শ্যালক নিয়মিত আইএসআইয়ের কাছে গোপন তথ্য পাঠাতেন এবং এর বিনিময়ে আইএসআই থেকে নোমানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিয়মিত অর্থ আসত বলে জানিয়েছে পানিপথ পুলিশ।

বাকি ছয় জনের সঙ্গেও বিভিন্ন সময় পাকিস্তানের হাই কমিশন কিংবা আইএসআইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। নিহত এই পর্যটকদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার একটি শাখা এই টিআরএফ।

অতর্কিত এই হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে সিন্ধু নদের পানি বণ্টনচুক্তি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, ভিসা বাতিলসহ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।

দুই দেশের মধ্যে চলমান এ উত্তেজনার মধ্যেই গত ৭ মে পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মিরসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান পরিচালনা করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইসলাবাদের তথ্য অনুযায়ী, অপারেশন সিঁদুর অভিযানে পাকিস্তানে মোট ৫১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৩ জন সেনাসদস্য, বাকিরা বেসামরিক। এদের পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও ৭৮ জন।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সেনা অভিযানের তিন দিনের মধ্যে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসুস’ শুরু করে পাকিস্তান। আরবি ‘বুনিয়ানুম মারসুস’-এর বাংলা অর্থ সীসার প্রাচীর। নয়াদিল্লির তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তানের পাল্টা এই অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৫ জন সদস্য ও ১৬ জন বেসামরিক নিহত হয়েছেন।

এদিকে পাল্টাপাল্টি এই সংঘাতের মধ্যেই তৎপর হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের চাপে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। ১০ মে শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে এই যুদ্ধবিরতি।

 

 

সূত্র : এনডিটিভি / এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *