রাত ৯:২৬ | বুধবার | ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ১লা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচন নিয়ে স্বস্তিতে বিএনপি !

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল

১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

 

২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে দেশে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যের পর কিছুটা স্বস্তিতে বিএনপি। আজ সোমবার সকালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টার এমন ঘোষনার পর এটিকে সাদুবাদ জানিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তবে একইসাথে তারা বলেছেন, দ্রুত নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা জনগণের হাতে দিতে হবে।

সূত্র মতে, গত আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণ অভূত্থানের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। একইসাথে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে বিভিন্ন ইস্যুতে সংষ্কার করতে সময় দেয়ারও পক্ষে অবস্থান নেয়। তবে দলটির অধিকাংশ নেতাই দ্রুত নির্বাচন জানিয়ে আসছিল। সবশেষ গত রোববার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের আর কত মাস প্রয়োজন, তা জনগণের জানার অধিকার আছে। আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার কথা শুনলেই যদি উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে, সেটি অবশ্যই গণ-আকাংখা বিরোধী হবে।

তারেক রহমানের এমন বক্তব্যের একদিন পরই আজ নির্বাচন নিয়ে বার্তা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইউনূস বলেছেন, যদি অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে আরও অন্তত ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।

যদিও এর আগে নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছিলেন সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকারুজ্জমান ও আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তারা দুজনই ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন হতে পারে এমন একটা ধারণার কথা বলেছিলেন। তবে পরক্ষণই আবার দুজনই নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাই সিদ্ধান্ত নিবেন বলে জানিয়ে নিজেদের বক্তব্য প্রত্যাহার করেছিলেন। এবার নির্বাচন নিয়ে খোদ প্রধান উপদেষ্টা একটা ধারণা দিয়ে বলেছেন, আগামী বছরের শেষে দিকে অথবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সময় সম্পর্কে ধারণা দিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া প্রয়োজন। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর চন্দ্রিমা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা। এ সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সময় সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়ে যে ভাষণ দিয়েছেন, সেটাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, আমি প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যটা শুনি নাই, আপনাদের মুখেই যেটা জানলাম। উনি যেটা বলেছেন, যথার্থ বলেছেন। নির্বাচনে যারা পার্টিসিপেট করবে, যারা অংশীজন, তারা যদি চায় তিনি যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেবেন। সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এর বাইরে কোন কথা কারো নাই। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া প্রয়োজন।

সংস্কার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা যুগ যুগ ধরে চলব্।ে এটা নতুন কিছু না। এটা একটা প্যাকেট না, একটা প্যাকেটে করে এনে আমি সংস্কার হয়ে গেলাম। এটা সময়ের বিবর্তনে, সময়ের চাহিদায় সংস্কার প্রয়োজন হয়। আমরা আশা করছি, এ সরকার দ্রুততম সময়ে জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফেরত দেবে। এটাই আমাদের কাম্য।

মির্জা আব্বাস সাংবাদিকদের বলেন, বিজয় দিবসের এ শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে এত এত মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে দেশের মানুষ ভোটের অধিকার চান। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া প্রয়োজন। আর জনগণ যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চান। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবে।

এ সময় সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের একটি ধারণা দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি ধারণা নয়, নির্বাচনের নির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন। কিন্তু তাতে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই।

সালাহ উদ্দিন আহমদ আরও বলেন, প্রয়োজনীয় কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার করা হবে, সে জন্য কতটা সময় প্রয়োজন, তা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট নয়। আমরা আশা করি, তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) সংস্কারের সময় ও নির্বাচনের সময় সুনির্দিষ্ট করে একটি রোডম্যাপ দেবেন।

শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদ তালুকদার, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন, নাজিম উদ্দিন আলম, সাইফুল আলম নিরব, আশরাফ উদ্দিন বকুল, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহানগর উত্তর বিএনপির আমিনুল হক, দক্ষিণের তানভীর আহমেদ রবিন, যুবদলের আবদুল মোনায়েম মুন্নাসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গতকাল সোমবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লিখেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাস্তব রোডম্যাপ জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। সরকার কী অর্জন করতে চায় এবং প্রয়োজনীয় সময়সীমা কী সেটা জনগণের জানার অধিকার রয়েছে। স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তন থেকে রাষ্ট্র ও সরকারকে রক্ষা করতে হলে দৈনন্দিন চর্চায় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি লালন করা নিয়ম ও বিধান মেনে চলার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মনে রাখতে হবে, জনগণের ক্ষমতায়ন ছাড়া জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী বা টেকসই হতে পারে না। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংসদ জনগণের আশা-আকাংখার প্রতিফলন ঘটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সূত্র মতে, দেড় যুগ ধরে টানা ক্ষমতার বাইরে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। দীর্ঘ এ সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নে সাংগঠনিকভাবে বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়ে দলটি। এখন দল গোছানোর পাশাপাশি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ভোটের মাঠ সাজাচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে নিজ নিজ এলাকায় সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা আশা করছি, যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার শেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অগ্রাধিকার হওয়া উচিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে। সবশেষ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপেও বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের বক্তব্য জানিয়েছি। তিনি বলেন, নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সমস্যা তত কমে আসবে। জনগণ ভোট দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।

সম্প্রতি শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, আগামী বছরই বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার দেখবে জনগণ। এই উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পর বিএনপি নেতারা ধারণা করছেন ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালের আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করবে। যদিও বিএনপি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বার বার দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। গতকালকে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর নির্বাচন ইস্যুতে কিছুটা স্বস্তিতে বিএনপি, এমনই নেতাদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *