নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ মার্চ ২০২৫
আদালত রায়ে মাধ্যমেই ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের ‘জনতার মেয়র’ জনগনের কাতারে ফিরে এসেছেন বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ যখন নির্বাচনের দিন নির্বাচনী কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না ভোটারদেরকে, ধানের শীষের নির্বাচনী এজেন্টদের ঘাঢ় ধরে বের করে দেয়া হচ্ছে এবং নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে বার বার আক্রমণ করা হচ্ছে এবং আমি নিজেও সেই আক্রমণের শিকার হয়েছিলাম, রক্তাক্ত করা হয়েছিলো আমাকে। কি সন্ত্রাসী নির্বাচন হয়েছে আাপনারা দেখেছেন?”
‘‘ সেই অবৈধ নির্বাচন, ভোট ডাকাতির নির্বাচনের বিরুদ্ধেই ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক ন্যায়ের আদালতে সেই সময় মামলা করেছিলেন। সেই মামলার ফলাফল এতোদিন পরে পেয়েছেন। এই রায় অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত, এটা সুবিচার পেয়েছেন। ইনশাল্লাহ এই সুবিচারের মধ্য দিয়েই জনগনের মেয়র জনগনের কাতারে ফিরে এসেছেন।”
বৃহস্পতিবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন। সেই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র ঘোষণা করে সরকারের জারি করা গেজেটও বাতিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হয়েছে।
ইশরাক হোসেন অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে এবং বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য।
‘আমি হারি নাই, আমাকে হারানো হয়েছে’
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘‘ এই আইনি লড়াইটা সম্পন্ন করার জন্য শুরু থেকেই আমরা লেগেছিলাম। তার মাধ্যমে যে, অবৈধভাবে যে ক্ষমতা দখল করেছিলো, এটা ভোট রিগিং করে মেয়র পদ দখল করেছিলো তার বিরুদ্ধে আমরা যে একটা আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করাই ছিলো আমাদের উদ্দেশ্য।”
‘‘ একটি মহল এক বিষয়টি ফোকাস করছে না। তারা দেখাচ্ছে যে, আমরা বিএনপি মেয়র পদে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা যে আইনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলাম সেটা তারা বলছে না, আমরা যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছি সেটা কিন্তু বলা হচ্ছে না।আমি কিন্তু সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে হারি নাই, আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে… এটা কাগজে-কলমে প্রতিষ্ঠা পাক সেটাই আমাদের লক্ষ্য ছিলো।”
আল্লাহ‘র প্রতি শুকরিয়া আদায় করে তিনি বলেন, ‘‘ আমি দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর আইনি লড়াই করার পর গতকাল আদালত এই রায় পেয়েছি। আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি।”
‘‘ এখন দলের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবেন এবং সবকিছু বিচার বিশ্লেষন করেই সিদ্ধান্তটি নেয়া হবে। সেই অনুযায়ী পরবর্তি পদক্ষেপ আমরা নেবো।”
ইশরাক বলেন, ‘‘ আমি নির্বাচনের পর ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেছিলাম। এই মামলাটি ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা থাকলে বিগত ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের আমলে এটাকে বাধাগ্রস্থ করে অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখলকারী তাপস(ফজলে নূর তাপস) তিনি এই মামলা বাতিলের জন্য আদালতের ওপর চাপ দেন এবং মামলা বাতিল করার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করে মামলার শুনানি বন্ধ করে রাখেন।”
‘‘ পরবর্তিতে ৫ আগস্টের পর আদালত শুনানী করে এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া শেষে আমি রায় পাই। এখন আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি সেটাকে যদি বিএনপি সদস্য বলে আমার ন্যায় বিচার প্রাপ্তিকে বিতর্কিত করা হয় তাহলে সেটার বিচার জনগনই করবে।এই রায়টি সাড়ে চার বছর আগে ১৮০ দিনের মধ্যে হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার আমলে এই রায় হতে দেয়া হয়নি।”
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জাতীয়তাবাদী রিক্স, ভ্যান, অটো চালক দলের উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ শুভেচ্ছা প্রদান উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠান হয়। পরে ছাত্র-জনতা বিপ্লবে রিক্স, ভ্যান, অটো চালকদের মধ্যে যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবার ও আহত সদস্যদের হাতে তারেক রহমানের দেয়া ঈদ শুভেচ্ছা দেন রিজভী।
‘এখনো কেনো শ্রমিকরা বেতন-বোনাস পাইনি’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘ এখনো ১২২টা গার্মেন্টেসের শ্রমিকরা কেনো বেতন পায় না এটা একটা বড় প্রশ্ন। প্রায় অর্ধশতাধিক গার্মেন্টস তারা বোনাস পায়নি কেন?”
‘‘ সরকার হচ্ছে, মালিক পক্ষ এবং শ্রমিক পক্ষের মধ্যে একটি লিয়াজোঁ অফিসারের ভূমিকার পালন করেন। এই জিনিসগুলোর দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে। একজন শ্রমিক যদি না খেয়ে থাকে, ঈদের আগে সে যদি বেতন না পায় তাহলে শ্রমিকদের পরিবার তাহলে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে না। এটাই তো হচ্ছে জনহিতকর পদক্ষেপ সরকারের দিক থেকে হওয়া উচিত। এটা সরকারের দেখা উচিত ছিল।
‘নির্বাচন নিয়ে কেনো ধোঁয়াশা’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে… ডিসেম্বর না জুন না মার্চ…. একেক সময় এককটা কথা… এটা তো শেখ হাসিনার কিছু কথা-বার্তার সাথে এটার মিল পাওয়া যায়। কেনো এটা হবে? অন্তবর্তীকালীন সরকার জনগনের রক্তের উপর গঠিত সরকার, অন্তবর্তীকালীন সরকার অকাতারে জীবনদানকারী শিশু-কিশোর-তরুণ-নারী-রিক্স-ভ্যান শ্রমিকদে;র চালকদের রক্তের ওপর গঠিত সরকার।”
‘‘ অন্তবর্তীকালীন সরকার ১৬ বছর বিএনপির নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে যে আপোষহীন ধারা যে ধারায় গুম,খুন, ক্রসফায়ারের মধ্য দিয়ে যে অরাজগতা তৈরি করেছিলো শেখ হাসিনা সেই ফ্যাসিস্টকে পরাজিত করে গঠিত সরকার। সেই সরকার জনগনের কাছে স্পষ্ট নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে মাসের কথা বলে তারা একটা নির্বাচনের প্রক্রিয়া তৈরি করবেন। আমরা কখনো শুনছি ডিসেম্বর, কখনো শুনছি মার্চ, কখনো আবার জুন এই ধরনের একটা পেন্ডুলামের মতো বক্তব্য ঝুলছে সরকারের.. এই দুলায়মান অবস্থা থেকে জাতিকে একটি নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে স্পষ্ট করা দরকার।”
তিনি বলেন, ‘‘ অনেকে আবার বলেন, আরে আন্দোলন কি করা হয়েছে শুধু নির্বাচনের জন্য।”
‘‘ আরে ভাই অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন শেখ হাসিনা সুষ্ঠু করেনি বলেই তো আন্দোলন হয়েছে, শেখ হাসিনা অমল-ধবল গদি রক্ষার জন্য দেশকে একটা রক্ত ঝরা কারবালায় পরিণত করে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন… সেজন্য তার পতনে এক ব্যাপক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, অনেক রক্তদানের পর এই অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে।”
অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ ও জাতীয়তাবাদী রিক্স,ভ্যান অটো চালক দলের প্রধান আরিফুর রহমান তুষার বক্তব্য রাখেন।
জা ই / এনজি