সন্ধ্যা ৭:১৬ | শনিবার | ২৪ মে, ২০২৫ | ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল | ২৫ জিলকদ, ১৪৪৬

নির্বাচনের অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুকৌশলে আবহাওয়া তৈরি করা হচ্ছে— তারেক রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদক

০২ মে ২০২৫

 

নির্বাচনের অনুষ্ঠানের দাবি বিরুদ্ধে ‘সুকৌশলে আবহাওয়া তৈরি করা হচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন তারেক রহমান।

শুক্রবার সকালে আমার বাংলাদেশ(এবি) পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ রাষ্ট্র-রাজনীতির গুনগত সংস্কার এবং নাগরিকদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সবসময় জনগনের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে। রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দাবি জানাবে… এটি স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক নীতি।

‘‘ অথচ আমরা খেয়াল করছি গত কিছুদিন ধরে অত্যন্ত সুকৌশলে এমনটি একটি আবহাওয়া তৈরি করছে যেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করাটাই যেন একটি অপরাধ। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অবজ্ঞাসূচক বক্তব্য-মন্তব্য কিন্তু পলাতক স্বৈরাচারকেই কিন্তু আনন্দ দেয়।অপরপক্ষে এটি গণতন্ত্রকামী জনগনের জন্য কিন্তু অপমানজনক।”

তারেক রহমান প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘‘ রাষ্ট্র রাজনীতি মেরামতের জন্য সংস্কারের কর্মযজ্ঞ চলছে। তবে চলমান সংস্কার যদি রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিকে অবজ্ঞা করতে হয়, প্রলুব্ধ করে তাহলে সংস্কারের তাপর্যটা কি… এটি বহু মানুষের প্রশ্ন আছে।”

‘‘ দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে।তারপরেও সংস্কার নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার কেনো এতো সময় ক্ষেপন করছেন এ নিয়েও জনগনের মনে ধীরে ধীরে প্রশ্ন বেড়েই চলেছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে অবজ্ঞা এবং জনগনের রায়কে অবহেলা করে বিরাজনীতিকরণকে উৎহিত করা হলে সেটি শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে।”

 

‘সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিন’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আবারো আজ এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।”

‘‘ রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগনের আদালতের মুখোমুখি করার উদ্যোগ গ্রহন করতে হব এবং এই উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারকে। জনগনের ভোটের মাধ্যমে জনগনের কাছে জবাবদিহিমূলক সংসদ ও সরকার গঠিত হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুসংহত থাকবে।”

তার মতে, ‘রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে সরকার গঠন এবং পরিবর্তনে জনগন ও রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যস্ত হয়ে উঠলে আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশকে আর কেউ তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে সক্ষম হবে না ইনশাল্লাহ’।

জাতীয় প্রেসক্লা্ব মিলনায়তনে এবি পার্টির পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠান হয়। এতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত বিভিণ্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিণেন।

এবি পার্টি ২০২০ সালের ২ মে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’ এই তিন মূলনীতির ভিত্তিতে অধিকার ভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে যাত্রা শুরু করে।

‘রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে অভিন্ন’

তারেক বলেন, ‘‘যে দলগুলো আমরা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে গণতন্ত্রের পক্ষে রাজপথে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছি। ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর নতুন করে আরও কমপক্ষে ২৫ টি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। রাজনৈতিক ময়দানে আমরা তাদের স্বাগত জানাই।”

‘‘ গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি, দেশের স্বার্থের প্রশ্নে বাংলাদেশের পক্ষের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান এক ও অভিন্ন… উদ্দেশ্যে এবং গন্তব্য এক ও অভিন্ন। কি সেটি? সেটি হচ্ছে দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং অবশ্যই জনগনের কল্যাণ সাধন।”

‘ব্ল্যাইম গেইম দিয়ে দায়িত্ব এড়ানো যাবে না’

 

যে রাজনৈতিক দলটি গনতান্ত্রিক চরিত্র হারিয়ে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম এবং বাংলাদেশকে একটি তাবেদারী রাষ্ট্র পরিণত করছিলো তাদেরকে্ এদেশের জনগনের কখনো মেনে নেবে না মন্তব্য করে তারেক বলেন, ‘‘ সংবিধান লঙ্ঘনকারী বিতাড়িত পতিত পলাতক স্বৈরাচার পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। আমাদের সংবিধানের ৬৫/২ অনুচ্ছেদের নির্দেশনা হচ্ছে, জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘন করে এই পলাতক স্বৈরাচার জনগনের ভোট ছাড়াই তিনবার অবৈধ সংসদ ও সরকার গঠন করে।”

‘‘ বাংলোদেশের গণতন্ত্রকামী জনগন আজ জানতে চায়, সংবিধান লঙ্ঘনের দায় অভিযুক্তদের আগামী দিনে রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে অন্তর্বতীকালীন সরকার কি পদক্ষেপ গ্রহন করেছে বা নিয়েছে। ব্ল্যাইম গেইম দিয়ে দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্তবর্তীকালীন সরকার পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জনগনের ভোটে নির্বাচিত সরকার অবশ্যই আগামী দিনে সংবিধান লঙ্ঘণের দায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।”

‘স্থানীয় নির্বাচন: স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের সূবর্ণ সুযোগ’

 

তারেক বলেন, ‘‘ পলাতক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না দিয়ে যারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলেছেন, তাদেরকে আমি বলতে চাই, লুটপাট আর দুর্ণীতির শত শত কোটি টাকা হাতে নিয়ে সারাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরা পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগের অপেক্ষায়। স্থানীয় নির্বাচন পলাতক স্বৈরাচারের জন্য পুনর্বাসিত হওয়ার একটা সূবর্ণ সুযোগ।”

‘‘ যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলেছেন হয়তবা তারা এই বিষয়টি এভাবে বিবেচনা করেননি।আমি অনুরোধ করবো বিষয়টাকে এইভাবে বিবেচনা করার জন্য।”

’৭১ এবং ’২৪ প্রসঙ্গে

তারেক বলেন, ‘‘ বাংলাদেশের ৫৪ বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন যদি আমরা এভাবে দেখি… এক ১৯৭১ সাল ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের আর দুই ২০২৪ সাল ছিলো দেশ এবং জনগনের স্বাধীনতা রক্ষার। বাংলাদেশ নামক এই জাতি রাষ্ট্রে্র স্বাধীনতা প্রিয় হাজারো লাখো শহীদের রক্তে লেখা স্মারকে ’৭১ আর ’২৪ এর রাজনৈতিক বার্তাটি হলো… দিল্লীর তাবেদার হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে পিন্ডি ত্যাগ করে নাই। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সিপাহী জনতাও এই বার্তাটি দিয়েছিলো।”

‘‘গণতন্ত্রকামী জনগনের স্বাধীনতার বার্তাটি উপেক্ষা করে পতিত পলাতক স্বৈরাচার দীর্ঘ দেড় দশক স্বাধীন বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলো।ভবিষ্যতে যাতে আর কেউ কখনো বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার দুঃসাহস না দেখায়… পরাজিত তাবেদার অপশক্তি আর তাদের দোসররা আর যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেটি হোক বাংলাদেশের আজ এবং আগামী দিনের বন্দোবস্ত।”

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদের সঞ্চালনায় জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জনসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি) নাহিদ ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, গণঅধিকার পরিষদের নূরুল হক নূর, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী প্রমূখ রাজনীতিকরা বক্তব্য রাখেন।

 

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *