রাত ৯:৪০ | বুধবার | ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ১লা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: ভারতকে অবশ্যই কাশ্মীর হামলায় পাকিস্তান জড়িতের প্রমাণ দিতে হবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

৩০ এপ্রিল ২০২৫

 

 

ভারতশাসিত কাশ্মীরে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারত প্রত্যেক সন্ত্রাসী ও তাদের মদতদাতাদের খুঁজে বের করবে এবং শাস্তি দেবে।

১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে ভারতবিরোধী বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে পর্যটকদের লক্ষ্য করে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। পাশাপাশি, ২০১৯ সালে ভারতের আধাসামরিক বাহিনীর ওপর আত্মঘাতী হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা।

ভারত গত ২৭ এপ্রিল দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মহড়ার মাধ্যমে এর সামরিক জবাব দিয়েছে। এছাড়া, পাকিস্তানের কয়েকজন কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। দুই দেশই সীমান্তে গোলাগুলি করেছে, এতে নতুন করে সংঘর্ষের আশঙ্কা বাড়ছে।

প্রমাণ দিতে হবে ভারতকে

প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের প্রথম শর্ত হলো, নির্ভরযোগ্য প্রমাণ। স্থানীয় পুলিশ দুই পাকিস্তানি ও এক ভারতীয় সন্দেহভাজনের সন্ধানে রয়েছে। ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামে একটি গোষ্ঠী হামলার দায় প্রথমে স্বীকার করলেও পরে দাবি করেছে, তাদের সামাজিকমাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল। ২০১৯ সালে ভারত সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর টিআরএফ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২৩ সালে একে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত সরকার।

টিআরএফকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) ছদ্মবেশী শাখা হিসেবে দেখেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে এলইটির দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে এবং এটি ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার জন্য দায়ী, যেখানে প্রায় ১৭০ জন নিহত হন। তবে টিআরএফের সঙ্গে সরাসরি লস্কর-ই-তৈয়বার সম্পর্কের এখনো কোনো প্রামাণ্য তথ্য প্রকাশ করেনি ভারত।

দ্বিতীয় শর্ত হলো, যেকোনো প্রতিক্রিয়া ভারতের কৌশলগত লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হতে হবে। ২০১৬ ও ২০১৯ সালের হামলার পর ভারত পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে বিমান হামলা ও বিশেষ অভিযান চালিয়েছিল। মোদী সরকার ২০১৯ সালে কাশ্মীর সরাসরি শাসনের আওতায় এনে শান্তি আনার অঙ্গীকার করেছিল। এখন তিনি রাজনৈতিকভাবে চাপ অনুভব করলেও নিজেকে শক্তিশালী নেতা দেখাতে প্রতিশোধ নিতেও আগ্রহী হতে পারেন।

এক্ষেত্রে ভারত সীমিত সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখালে তা দ্রুত বিস্তৃত হতে পারে। পাকিস্তান এরই মধ্যে একটি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে এবং সম্ভাব্য ভারতীয় হামলার ব্যাপারে সতর্ক করেছে। ২০১৯ সালের মতো এবারও সংঘর্ষ ঘটলে পাকিস্তান হয়তো আর আগের মতো নমনীয় থাকবে না। বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনির অভ্যন্তরীণ চাপ থেকে নজর সরাতে ভারতকে উসকানি দেওয়ার কৌশল নিতে পারেন। একবার যুদ্ধ শুরু হলে তা থামানো কঠিন হয়ে পড়বে।

এ জন্যই হামলার প্রকৃত উৎস নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ভারতকে সংযত থাকতে হবে। সুনির্দিষ্ট সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে আঘাত যুক্তিসঙ্গত হতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানি সেনা ঘাঁটিতে হামলা—যদি সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততার নিশ্চিত প্রমাণ না থাকে—তা ন্যায্য হবে না।

ভারতের জন্য যুদ্ধের বিকল্প কী?

যুদ্ধ ছাড়াও ভারতের হাতে অন্য চাপ সৃষ্টির কৌশল আছে: যেমন আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রমাণ প্রকাশ করে পাকিস্তানকে লজ্জিত করা, কিংবা আইএমএফের ৭০০ কোটি ডলারের তহবিল বন্ধ করতে চেষ্টা চালানো। ভারত যদি পানিচুক্তি স্থগিত করেও পানিপ্রবাহ না রোধ করে, সেটিও একটি বার্তা বহন করে: পাকিস্তান তার প্রতিবেশীর সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক গড়লে উপকৃত হবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মোদীকে দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিতে চিন্তা করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রধান শক্তি হিসেবে ভারত যে ভূমিকা নিতে চায়, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ সেই লক্ষ্য ভেস্তে দিতে পারে। চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের সুযোগ নেওয়ার পরিকল্পনাও বাধাগ্রস্ত হবে। বরং ভারত যদি সামরিক আধুনিকায়নে মনোযোগ দেয়, তাতেই পাকিস্তানকে ঠেকানো সম্ভব—এবং চীনের সঙ্গেও শক্তির ভারসাম্য গড়ে তোলা যাবে। বাস্তবিক অর্থে ভারতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামাবাদ নয়, বেইজিং।

টি আই/ এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *