রাত ৯:৩৭ | বুধবার | ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ১লা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনট্রাম্পের অভিবাসী বহিষ্কারে কাজের চেয়ে আওয়াজ বেশি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

 

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার তিনদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) নিউ জার্সির নিউয়ার্ক শহরের আয়রনবাউন্ড জেলায় অবস্থিত ওশান সিফুড গুরমে মার্কেট অ্যান্ড ডিপোতে অভিযান চালায়। কর্মকর্তারা সেখানে কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ওই অভিযানে তিনজনকে আটক করা হয়। যদিও কর্মকর্তাদের কাছে আদালতের কোনো ওয়ারেন্ট ছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়।

এই অভিযানের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিশ্রুত কঠোর অভিবাসন নীতি বাস্তবায়নের সূচনা হয়। অন্যান্য অভিযানে মন্ত্রিসভার কর্মকর্তারা এবং টিভি ক্যামেরার উপস্থিতিও দেখা গেছে, যা অভিবাসীদের মধ্যে ভয় তৈরি করতে এবং ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বার্তা জোরালো করতে ব্যবহৃত হচ্ছে।

নিউয়ার্কের মতো ডেমোক্র্যাট-শাসিত এলাকায় এমন অভিযান রাজনৈতিক বিরোধীদেরও টার্গেট করছে। নিউয়ার্কের মেয়র রাস বারাকা বলেন, আপনি ইচ্ছামতো কাউকে আটক করতে পারেন না। যথাযথ কারণ ছাড়া কাউকে থামানোও ঠিক নয়। তিনি জানান, শহরের আইনজীবীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় এবং এ ধরনের অভিযানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে অনুমতি ছাড়া বসবাসকারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বলে ধারণা করা হয়। তবে নিউয়ার্কের অভিযানের মতো বাজারে হানা দিয়ে একবারে মাত্র তিনজনকে আটক করে এত বড় সংখ্যায় বহিষ্কার করা সম্ভব নয়। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর আইসিই প্রতিদিন ২৮৬ থেকে ১ হাজার ১৭৯ জনকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়েছে। তবে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি গ্রেফতারের ধারা বজায় রাখা কঠিন হবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষ্য ছিল, তারা অপরাধী অভিবাসীদের টার্গেট করবে। কিন্তু বাস্তবে, নিউয়ার্কের মতো অভিযানে দেখা গেছে, অপরাধের রেকর্ডবিহীন অভিবাসীরাও আটক হচ্ছেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, আটক ব্যক্তিদের ১৪ শতাংশ কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, যা আগের তুলনায় ছয় শতাংশ বেশি।

বেশিরভাগ অভিযান যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে ঘটছে, যেখানে অভিবাসীদের আটক করা তুলনামূলক সহজ এবং কম ব্যয়বহুল। কিন্তু গত ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, সীমান্তে অনিয়মিত অভিবাসনের হার ২০২১ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তল্লাশি চালাতে হলে নির্দিষ্ট বিধিনিষেধের মুখে পড়তে হয়। তারা কেবল জনসাধারণের প্রবেশযোগ্য স্থান বা ব্যক্তিগত ব্যবসার পার্কিং লট ও লবির মতো উন্মুক্ত এলাকায় প্রবেশ করতে পারে। আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো ঘরে প্রবেশ করে সবাইকে চেক করার সুযোগ তাদের নেই।

নিউয়ার্কের মতো অভিযানগুলোর অকার্যকারিতা দেখিয়ে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ মুজাফফর চিশতি বলেন, বড় ধরনের অভিযানের ফলাফল তেমন কার্যকর হয় না। উদাহরণস্বরূপ, গত ২৮ জানুয়ারি নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে আরেকটি বড় অভিযানে মাত্র একজন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোম বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে আইসিই-এর সঙ্গে অভিযানে যোগ দিলেও ফলাফল আশানুরূপ হয়নি।

স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া অভিবাসীদের খুঁজে বের করা কঠিন। তবে অনেক ডেমোক্র্যাট-শাসিত শহর অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চায় না। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেও এসব তথাকথিত ‘স্যাংকচুয়ারি’ শহর তার পরিকল্পনার পথে বাধা তৈরি করেছিল। যদিও নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস আইসিই’কে রাইকার্স দ্বীপের কারাগারে একটি অফিস চালুর অনুমতি দিয়েছেন, যা প্রশাসনের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

বহিষ্কার পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ

গত ২৯ জানুয়ারি ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা দেয়, ছয় লাখ ভেনেজুয়েলান নাগরিকের সাময়িক অভিবাসন সুরক্ষা বাতিল করা হবে। এদের বহিষ্কার তুলনামূলক সহজ হতে পারে, তবে বড় আকারের আটক অভিযানের জন্য আরও বেশি বন্দিশিবির প্রয়োজন।

এজন্য ট্রাম্প নতুন পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি গুয়ানতানামো বে’র সামরিক ঘাঁটিতে ‘উচ্চ-প্রাধান্যপ্রাপ্ত অপরাধী অভিবাসীদের’ জন্য বন্দিশিবির বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এরই মধ্যে এল পাসো থেকে কয়েকটি বিশেষ ফ্লাইটে আটক অভিবাসীদের সেখানে পাঠানো হয়েছে।

তবে গুয়ানতানামো ঘাঁটির ধারণক্ষমতা মাত্র ৩০ হাজার, যা ট্রাম্পের ঘোষিত পরিকল্পনার তুলনায় নগণ্য। যদি প্রশাসন সত্যিই এক কোটি অভিবাসী বহিষ্কার করতে চায়, তাহলে আরও বহু বন্দিশিবির গড়ে তুলতে হবে।

ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি তার রাজনৈতিক বক্তব্যের চেয়ে বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। গণহারে বহিষ্কার বাস্তবায়নের জন্য বিশাল লজিস্টিক ও আইনি বাধার মুখোমুখি হতে হবে। এখন দেখার বিষয়, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প কতটা সফল হতে পারেন।

 

 

শ ই/ এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *