দুপুর ১:৩৪ | শনিবার | ২৪ মে, ২০২৫ | ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল | ২৫ জিলকদ, ১৪৪৬

দিল্লি থেকে ৪০ রোহিঙ্গাকে ধরে সাগরে ‘ফেলে দিলো’ ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৬ মে ২০২৫

 

রাজধানী দিল্লি থেকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ৪০ জনকে ধরে নিয়ে তাদের বঙ্গোপসাগরের পাশের আন্দামান সাগরে নিয়ে ফেলে দিয়েছে ভারত। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস এমন ভয়াবহ তথ্য জানিয়েছে।

তারা বলেছে, ভারত সরকার সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া জোরদার করেছে। এর অংশ হিসেবে ভারতীয় নৌবাহিনী ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সাগরে ফেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রোহিঙ্গারা বিশ্বের অন্যতম নিপীড়িত জনগোষ্ঠী। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর জাতিগত নিধন থেকে বাঁচতে দশ লাখেরও বেশি মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর মধ্যে ২২ হাজারের বেশি মানুষ ভারতে জাতিসংঘের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পান।

তবে ভারত সরকার রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। দেশটির সরকার দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে আসছে এবং তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এনেছে। আইনগতভাবে ভারতে কেউ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে পারেন না। তাই সব রোহিঙ্গাকে দেশটি অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করে।

মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষ্ঠুরতা অবলম্বন করেছে।

এরমধ্যে গত সপ্তাহের একটি ঘটনায় জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গত ৬ মে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে পুলিশ বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে আটক করে। এরমধ্যে ৪০ জনকে চোখ বেঁধে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মাইল দূরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে তাদের ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজে তোলা হয়। জাহাজটি আন্দামান সাগরের কাছে মিয়ানমারের তানিনথারি অঞ্চলের দিকে যাত্রা করে।

ওই জাহাজে থাকা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, তানিনথারির কাছে পৌঁছানোর পর তাদের লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হয় এবং সাগরে ঝাঁপ দিতে বাধ্য করা হয়। ওই সময় তাদের মিয়ানমারের একটি দ্বীপে সাঁতরে চলে যেতে নির্দেশ দেয় ভারতীয় সেনারা।

ভারতের মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল) জানিয়েছে, যাদের পানিতে ফেলা হয়েছিল তাদের মধ্যে কিশোর, বয়স্ক এবং ক্যানসার রোগীও ছিলেন।

তবে ভাগ্য ভালো থাকায় ওই ৪০ রোহিঙ্গার সবাই জীবিত অবস্থায় তীরে পৌঁছাতে সক্ষম হন। তাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, ভারতীয় নৌ সেনারা তাদের মারধর ও অন্যান্য নির্যাতন করেছে।

মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ বলেছেন, “নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাগরে ফেলে দেওয়ার ঘটনা অত্যান্ত ভয়াক। আমি এই ঘটনার বিষয়ে আরও তথ্য ও সাক্ষ্য সংগ্রহ করছি এবং ভারত সরকারকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি।”

ভারত গত সপ্তাহে বাংলাদেশেও ৭৮ জনকে পুশ ইন করে। যাদের গুজরাট থেকে ধরে এনে সুন্দরবনে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে গিয়েছিল। ১০ মে এসব মানুষকে উদ্ধার করে বাংলাদেশ। তারা জানিয়েছেন, তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। এমনকি তাদের না খাইয়ে রাখা হয়েছিল।

 

সূত্র: দ্য মেরিটাইম এক্সিকিউটিভ/ এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *