সকাল ১০:০০ | বুধবার | ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ১লা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

চিকিৎসায় আসবে নির্ভুলতা, কমবে সময়-খরচ : জিনোম সিকোয়েন্সিং-ভিত্তিক ক্যান্সার নির্ণয় সেবা চালু

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৩ এপ্রিল ২০২৫

 

বাংলাদেশে ক্যান্সার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অগ্রগতি, নেক্সট-জেনারেশন সিকোয়েন্সিংভিত্তিক (এনজিএস) ক্যান্সার শনাক্তকরণ সেবা চালু করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর, বি)। আগামীকাল (২৪ এপ্রিল) থেকে রাজধানীর মহাখালী, মিরপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি, উত্তরা, নিকেতন, গুলশান ও বারিধারাস্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং বুথসমূহে এই সেবা পাওয়া যাবে।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) আইসিডিডিআর,বি জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তি দেশের স্বাস্থ্যখাতে নির্ভুল এবং দ্রুত রোগ নির্ণয়ের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আইসিডিডিআর,বি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধীনে পরিচালিত এই সেবার মাধ্যমে রোগীদের আর বিদেশে নমুনা পাঠাতে হবে না বা সপ্তাহের পর সপ্তাহ রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এখন থেকে মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই নির্ভরযোগ্য রিপোর্ট হাতে পাবেন রোগী ও চিকিৎসকরা।

দেশের চিকিৎসকদের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ

বাংলাদেশে ক্যান্সার শনাক্তে দীর্ঘদিন ধরেই ছিল উন্নত ও নির্ভুল পরীক্ষার ঘাটতি। অনেক সময় রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব এবং ভুল রিপোর্ট রোগীর চিকিৎসাকে আরও জটিল করে তোলে। বিশেষ করে যেসব ক্ষেত্রে জিন-ভিত্তিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, সেগুলোর জন্য বিদেশে নমুনা পাঠানো ছাড়া বিকল্প ছিল না। এতে সময়, টাকা এবং মানসিক চাপ—সবকিছুই বেড়ে যেত।

আইসিডিডিআর,বি’র জিনোম সেন্টার এই চাহিদার জবাব দিতে সক্ষম হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের এনজিএস প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে।

কীভাবে কাজ করবে এই সেবা?

এই সেবায় রোগীর ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ থেকে জিনগত তথ্য বিশ্লেষণ করা হবে, যা চিকিৎসকদেরকে রোগীর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণে সহায়তা করবে। বিশ্বমানের এনজিএস মেশিন, বায়োইনফরমেটিক্স সফ্‌টওয়্যার এবং বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেশাদারদের মাধ্যমে এই পরীক্ষা চালানো হবে।

সেবা প্রসঙ্গে আইসিডিডিআর,বি’র সংক্রামক রোগ বিভাগের সিনিয়র বিজ্ঞানী ও ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র পরিচালক ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমরা বাংলাদেশে নির্ভুল ও সহজলভ্য ক্যান্সার নির্ণয়ের লক্ষ্যে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছি। বিশ্বমানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেশাদার কর্মীর দ্বারা অত্যাধুনিক অবকাঠামো প্রয়োগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ও সর্বোচ্চ গুণমান নিশ্চিত করে আমরা নেক্সট-জেনারেশন সিকোয়েন্সিং-ভিত্তিক ক্যান্সার নির্ণয়ের সক্ষমতা অর্জন করেছি। আমাদের প্রতিশ্রুতি হলো রোগীদের সময়োপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানের রিপোর্ট দেওয়া, যা চিকিৎসায় বড় ধরনের পার্থক্য গড়ে দেবে।”

তিনি বলেন, “আইসিডিডিআর,বি নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদের অনুপ্রেরণায় এই জীবন রক্ষাকারী এই সেবা প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করা সম্ভবপর হয়েছে। ড. তাহমিদ আইসিডিডিআর,বি জিনোম সেন্টারকে দেশের ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সহায়তা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে কৌশলগত দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।”

রোগীরা দ্রুত ফলাফল পেয়ে চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন

সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, “বিদেশে নমুনা পাঠানো, রিপোর্টের জন্য উদ্বিগ্ন অপেক্ষা—এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। এখন থেকে রোগীরা দ্রুত ফলাফল পেয়ে চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন। এটি শুধু একটি সেবা নয়, এটি চিকিৎসা ব্যবস্থায় একটি পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি।”

তিনি বলেন, “নির্ভুলভাবে ক্যান্সার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এর প্রয়োজনীয়তা আমরা উপেক্ষা করতে পারিনি। আমরা দেশের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি রোগীদের চিকিৎসায় এই সেবাটির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে। এটি ক্যান্সার চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসক ও রোগী সব পক্ষের জন্য আশা, আস্থা এবং নির্ভুল ফলাফল প্রদানের একটি প্রতিশ্রুতি।”

কোথায় কোথায় নমুনা দেওয়া যাবে?

রোগীদের সুবিধার্থে, আইসিডিডিআর,বি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং এর বুথসমূহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হবে। বর্তমানে মহাখালী, মিরপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি, উত্তরা, নিকেতন, গুলশান ও বারিধারায় এই সেবা পাওয়া যাবে।

আইসিডিডিআর,বি জিনোম সেন্টার ও এর সেবা সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য icddrbgc@icddrb.org ই-মেইলে বা (+৮৮০) ১৭১৩২৮৮০৮৬ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে।

কোন ধরনের ক্যান্সারে মিলবে সেবা?

জিনোম সেন্টারে নিচের ক্যান্সারগুলোর জন্য পরীক্ষাসমূহ পরিচালিত হবে: স্তন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার, রক্তের ক্যান্সার। এসব পরীক্ষার ফলাফলে চিকিৎসকরা রোগীর জন্য সময়োপযোগী এবং কার্যকর চিকিৎসা পরিকল্পনা নিতে পারবেন।

জানা গেছে, গত বছর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্যান্সার কংগ্রেসে সার্কভুক্ত দেশের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা, দ্য ল্যানসেট অনকোলজি এডিটোরিয়াল বোর্ডের সদস্য এবং বাংলাদেশের অনকোলজি ক্লাবের প্রতিনিধি দল আইসিডিডিআর,বি জিনোম সেন্টার পরিদর্শন করেন এবং এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

দেশে ক্যান্সার পরিস্থিতি কী বলছে?

বিএসএমএমইউ-র ২০২৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, বাংলাদেশে প্রতি এক লক্ষ মানুষে ১০০ জনেরও বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত, যার মধ্যে স্তন, মুখগহ্বর, পাকস্থলী, গলা এবং জরায়ু মুখের ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি। ৪৬% ক্যান্সার তামাক ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত। এছাড়া অনেকে রোগ নির্ণয়ে বিলম্বের সম্মুখীন হন, তাই প্রাথমিক পর্যায়ে ও নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা অপরিহার্য। এটি সুস্থ হবার সম্ভাবনাকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।

 

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *