নিজস্ব প্রতিবেদক
৩০ জুলাই ২০২৪
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন স্বৈরতান্ত্রিক সরকার যে নির্মম গণহত্যা চালিয়ে শত শত ছাত্র-শ্রমিক ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে তার বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের বিক্ষোভের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করে জাতীয় মুক্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখার আহবান জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে জাতীয় ছাত্রদল। জাতীয় ছাত্রদলের সভাপতি তৌফিক হাসান পাপ্পু ও সাধারণ সম্পাদক মধুমঙ্গল বিশ্বাস এক যুক্ত বিবৃতিতে সংঘটিত দলীয় ও রাষ্ট্রীয় গণহত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন।
আজ ৩০ জুলাই মঙ্গলবার বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় উল্লেখ করেন, দেশে চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম দেশের সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। চলতি অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণার পর শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য মৌলিক খাতেও খরচ আকাশ ছোঁয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শ্রমিক ও শ্রমজীবি মানুষের জীবন-যাপন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া সাম্রাজ্যবাদী সংস্থাসমূহের নীতি-নির্দেশে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের জীবন-জীবিকাকে কঠিন থেকে কঠিনতর করে তুলেছে। এ রকম অবস্থায় ছাত্রসমাজের কোটা সংস্কারের মত আংশিক দাবিও আজ বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরেছে। এই আন্দোলন দমনে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের নির্মম দমন-পীড়ন ও গণহত্যার চিত্র বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছে। স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও দলীয় সন্ত্রাস পৈশাচিকভাবে গুলি করে শত শত নিরীহ ছাত্র-শ্রমিক ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নর-নারী হত্যা করেছে। শান্তিপূর্নভাবে ছাত্ররা মিছিল সমাবেশ করার সময়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যাওয়া-আসার সময়, আহত-নিহত সহপাঠীদের উদ্ধার করার সময় এবং বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের পানি ও খাবার দেয়ার সময় নির্মমভাবে গুলি করে শত শত ছাত্রদের হত্যা করে। ঠিক একইভাবে শ্রমিকরা কর্মরত থাকা অবস্থায় অথবা কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পাখির মত গুলি করে মানুষ হত্যা করার এই বিভৎস দৃশ্য দেশবাসী কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। এর বিরুদ্ধে সারাবিশ্বের সাধারণ জনগণ তীব্র প্রতিবাদ করছে ও বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে। অথচ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ উদ্ভূত পরিস্থিতি স্ব-স্ব পরিকল্পনা ও লক্ষ্যে কাজে লাগাতে বিভিন্ন তৎপরতায় মেতে উঠেছে। দেশে ক্রিয়াশীল সাম্রাজ্যবাদের দালাল ও প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে সরকারের নিছক পদত্যাগের দাবি তুলছে। কিন্তু যে স্বৈরাচারী রাষ্ট্র ব্যবস্থা শত শত মানুষকে হত্যা করেছে সেই স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে তারা আড়াল করছে। পৃথিবীর ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয় যে, কেবলমাত্র শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠা না হলে বিদ্যমান স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরিবর্তন সম্ভব নয়।
নেতৃদ্বয় আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি নয়াঔপনিবেশিক আধা-সামন্তবাদী রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে শহরের শ্রমিকশ্রেণীর সাথে গ্রামাঞ্চলের ব্যাপক কৃষক-জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্রসমাজ জনগণের সন্তান। ছাত্রসমাজের আজকের আন্দোলন শ্রমিক-কৃষকের মুক্তির আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। ছাত্র-গণহত্যার উপর দিয়ে এক স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পরিবর্তে আরেক স্বৈরতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসলে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনগণ কারোই মুক্তি আসবে না। তাই আমাদের দেশে অসমাপ্ত যে জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তা ঐতিহাসিকভাবে নির্ধারিত শ্রমিক শ্রেনীর নেতৃত্বে অগ্রসর করে নিতে ছাত্র সমাজকে অগ্রণী ও উদ্যোগী ভূমিকা পালনের জন্য নেতৃদ্বয় বিবৃতিতে ছাত্রসমাজের প্রতি আহবান জানান।
টিআই/এনজি