মোহাম্মদ জাফর ইকবাল
১৪ অক্টোবর ২০২৪
শীঘ্রই ঘোষিত হতে পারে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটি। কারা থাকছেন নতুন এই কমিটিতে তা নিশ্চিত করে দলের কেউই বলতে পারছে না। তবে আলোচনায় আছেন দলের অনেক নেতাই। ক্লিন ইমেজ ও জনপ্রিয়তা যাচাই করে এবার শীর্ষ পদে নেতাদের আনতে চান দলটির হাইকমান্ড। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই, দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় এমন নেতাদের নেতৃত্বে আনতে কাজ করছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যেকোন সময় এই কমিটি ঘোষণা হতে পারে বলে দলটির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, উত্তরের নতুন কমিটিতে স্থান পেতে বেশ লবিং-তদবির শুরু করেছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। এই অবস্থায় দলের সিনিয়র নেতারা কেউ কেউ বলছেন, যারা আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন, মামলা-হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, জেল খেটেছেন তাদের মূল্যায়ন করা হবে।
জানা গেছে, সদ্য সাবেক আহবায়ক ও সদস্য সচিব এবং এর আগের কমিটিতে শীর্ষ এই দুই পদে থাকা নেতাদের বাদ দিয়েই নতুন কমিটির চিন্তাভাবনা চলছে। কারণ হিসেবে বলছেন, যে কারণে কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে, তাদের যদি আবারো কমিটির শীর্ষ পদে রাখা হয়, তাহলে সমালোচনা আরও বাড়বে। তৃনমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, যাদের সাংগঠনিক দক্ষতা বেশি, অভিজ্ঞতা আছে, রয়েছে ক্লিন ইমেজ। যাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলের অভিযোগ নইে, যাদের কাছে জনগনের যানমাল ও ইজ্জত নিরাপদ, এমন নেতাকেই নেতৃত্বে আনা উচিৎ।
দলের সিনিয়র নেতারা বলছেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিনে সাংগঠনিকভাবে দক্ষ অসংখ্য নেতা রয়েছে। সে তুলনায় উত্তরে নেতা কম। তাই দক্ষ নেতার হাতেই নের্তৃত্ব তুলে দিতে হবে।
দলীয় সূত্রে গেছে, ভেঙে দেয়া উত্তরের কমিটিতে পদ পাওয়া বেশ কয়েকজনকে জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হবে। সাইফুল আলম নিরব ও আমিনুল হকসহ আগের কমিটির অনেকেই আবারো নেতৃত্বে আসতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এদর ছাড়াই আহবায়ক কমিটিতে হবে বলে একাধিক শীর্ষ নেতা নিশ্চিৎ করেছেন।
উত্তরের নের্তৃত্বে সভাপতি বা আহ্বায়ক পদে আলোচনায় রয়েছেন উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়ার প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এ জি এম শামসুল হক প্রমুখ। তবে ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এমএ কাইয়ুমও আলোচনায় রয়েছেন। দলে তার ক্লীন ইমেজ ও বিএনপির প্রতি অনুগত বলে প্রচার রয়েছে।
এদিকে সাধারন সম্পাদক বা সদস্য সচিব পদে আলোচনায় রয়েছেন এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ। তিন যুগ ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি এর আগে যুগ্ম সম্পাদকদের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি একাধারে ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ। স্থানীয়ভাবে তার পারিবারিক একটি অবস্থান ও সুনাম রয়েছে। তিনি উত্তরের সাধারণ সম্পাদক পদে নেতৃত্বে আসতে চান। তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমার নামে ১৫৬ টি মামলা হয়। এর মধ্যে ২টিতে সাজা হয়েছে। আমি ৩বার জেল খেটেছি। সব অবস্থায় নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। সব কিছু বিবেচনা করে দল আমাকে মূল্যায়ন করলে আমি আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবো।
আলোচনায় আছেন এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনও। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তরে ছাত্রদল ও যুবদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২০ সালে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নও পান তিনি। সেই হিসেবে উত্তরে তার একটা শক্ত অবস্থান আছে। মহানগরের নেতৃত্বের জন্য অনেকেই তাকে যোগ্য মনে করছেন।
সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন মহানগর উত্তরের সাবেক সহ সভাপতি মো: লুৎফুর রহমান (এল রহমান)। তিনি এর আগে তেজগাও থানা বিএনপির সভাপতি, তেজগাও জোন বিএনপির প্রথম সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিরুদ্ধে ৭৪টি মামলা রয়েছে বলে তিনি জানান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একাধিকবার জেল খেটেছি। দলের জন্য সারাটি জীবন বিসর্জন দিয়েছি। গত আওয়ামী সরকারের আমলে দলের সব কটি কর্মসূচিতে রাজপথে স্বোচ্চার থেকেছি। আমাকে দল মূল্যায়ন করলে আমি আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবো। চাঁদাবাজি, দখল, অনিয়ম কোন কিছুই বরদাশত করা হবে না।
এছাড়া সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব পদে আলাচনায় রয়েছেন, ফয়েজ আহমেদ, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ফখরুল ইসলাম রবিন, গোলাম কিবরিয়া মাখন, এ বিএম রাজ্জাক, আক্তার হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, মামুন হাসানসহ ডজনখানেক নেতা।
আক্তার হোসেন বলেন, দেশনায়ক তারেক রহমান এর আগেও গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখেছিলেন। কাজের মধ্য নিয়ে সাংগঠনিক দক্ষতা প্রমান করার চেষ্টা করেছি। নেতাকর্মীরাও সব সময় আমাকে পাশে পেয়েছেন। আমার বিরুদ্ধে ৯৬ পি মামলা রয়েছে। জেল খেটেছি ১৮বার।
জানতে চাইলে মহানগর উত্তরের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার যুগ্ম আহবায়ক মো: আমির হোসেন টুলু বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা উত্তরের নেতৃত্বে দক্ষ ও যোগ্য সাংগঠনিক নেতাকেই চায়। যার বিরুদ্ধে কোনো চাঁদাবাজি, দখল বা স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নেই। রাজপথের পরীক্ষিতদের দিয়েই কমিটি করতে হবে। কারো দুর্নীতির দায় আমরা নেব না।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার আরেক সাবেক যুগ্ম আহবায়ক গোলাম নবী চৌধুরী রিপন বলেন, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগের উঠেছে তাদের দায় দল নেবে কেন? আমরা ক্লীন ইমেজের পরীক্ষিত নেতাদের নেতৃত্বে দেখতে চাই।
কমিটির বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কমিটি গঠনের কাজ চলছে। শীঘ্রই ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, ক্লীন ইমেজের, রাজপথের পরীক্ষিত , তাদেরই মূল্যায়ন করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে হঠাৎ করে কোনো কারণ উল্লেখ না করে আড়াই মাসের ব্যবধানে সাইফুল আলম নিরব ও আমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন দলের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক কমিট বিলুপ্ত করে বিএনপি। অভিযোগ রয়েছে, চাঁদাবাজি, দখলসহ নানা অভিযোগে এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
জা ই / এনজি