রাত ১১:১৫ | বুধবার | ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ১লা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

ক্যাম্পাসে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জবাব দিতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত : ওবায়দুল কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি
১৫ জুলাই ২০২৪

 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গতকাল রোববার রাতে ক্যাম্পাসে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ হয়েছে, তার জবাব দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছাত্রদের বিষয় ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেখিয়েছে। আমরা দেখি, কারা রাজনৈতিকভাবে প্রকাশ্যে আসে। আমরাও মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কোটাবিরোধী কতিপয় নেতা যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, এর জবাব দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত শিক্ষার্থীদের রাজাকার পরিচয়-সংশ্লিষ্ট স্লোগান আমাদের জাতীয় মৌলিক চেতনার সঙ্গে ধৃষ্টতার শামিল।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘কোটা সংস্কারের চলমান আন্দোলন নিয়ে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই মতামত ব্যক্ত করেছেন। যে বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন, সে বিষয় নিয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলা সমীচীন নয়। বারবার আন্দোলনকারীদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীদের অনেকের রাজনৈতিক বক্তব্য ও কুৎসিত স্লোগান আমরা শুনেছি। এত দিন আমরা যে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলাম, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে তারা আসলে সরকারবিরোধী আন্দোলনই করতে যাচ্ছে। এর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণ আছে। সমর্থন তারা প্রকাশ্যেই করেছে। কাজেই আমাদের যে আশঙ্কা, সেটা গতকাল রাতেই আরও স্পষ্ট হয়েছে, তাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী স্লোগানে সত্য বলেই প্রমাণিত হয়েছে।’

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘ভুলে গেলে চলবে না, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ করেছে সর্বোচ্চ। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আমরা অত্যন্ত সংবেদনশীল। আমরা মনে করি, ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে চিহ্নিত অপশক্তি সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করতে চায়। তাদের কারসাজিতে তাদের ক্রীড়নকেরা গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের অস্তিত্বকে আঘাত করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী স্লোগান উচ্চারণ করেছে। তারা সমগ্র ছাত্রসমাজকে সরকারের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করেছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য আন্দোলনের নেপথ্যে থাকা মতলববাজ কুশীলবেরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিক্রীত করেছে।’

সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা পাবে না তো কি রাজাকারের নাতি–পুতিরা পাবে—এ কথা তিনি যথার্থই বলেছেন। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তস্নাত বাংলাদেশের পবিত্র মাটিতে রাজাকারের ঠাঁই দেব না।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো অপমান বাঙালি জাতি সহ্য করবে না। পরাজিত অপশক্তির কোনো প্রকার আস্ফালন আমরা মেনে নেব না। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কিংবা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী বেঁচে থাকতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে স্বাধীনতার পরাজিত অপশক্তির অপতৎপরতা প্রতিরোধ করব।’

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের মহান আত্মত্যাগ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। কিন্তু যারা নিজেদের রাজাকার পরিচয় দিতে গৌরব বোধ করে, তাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করে না? যারা রাষ্ট্রের মূল চেতনাকে অবজ্ঞা করে, তারা কীভাবে মেধাবী ছাত্র হয়? তারা কীভাবে জাতি কিংবা ছাত্রসমাজের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে?’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দেশীয় আলবদর-রাজাকারদের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নির্বিচার হত্যা করেছে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কীভাবে নিজেদের রাজাকার বলে স্লোগান দেয়? এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু পরিবারের অধিকাংশ সদস্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।’

সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে যেকোনো অপশক্তিকে আমরা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করব—এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, কোটা সংস্কারের বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে অন্য কোনো উপায়ে কিংবা বল প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই। আন্দোলনের নামে জনজীবনে কোনো ধরনের দুর্ভোগ তাঁরা মেনে নেবেন না। রাস্তা বন্ধ করে সভা-সমাবেশ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে। এমন সভা-সমাবেশ তাঁরা মেনে নিতে পারেন না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনের কুশীলব বিএনপি-জামায়াতসহ অপশক্তিগুলোর স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অপশক্তির আস্ফালনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।

জা ই /এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *