রাত ৩:৪৭ | বৃহস্পতিবার | ১লা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২রা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

কোটা ইস্যুতে ছাত্রলীগের ১২৪ নেতার পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ জুলাই ২০২৪

 

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করা মন্তব্য ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ করছেন সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অন্তত ১২৪ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

রোববার (১৪ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সেদিন রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের পাঁচজন নেতা পদত্যাগ করেন। এরপর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় পদত্যাগের হিড়িক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত পদত্যাগ করেছেন চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক-মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন এসব নেতাকর্মী।

এ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে অন্তত ১৮ নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন। জান্নাতুল মাওয়া রোকেয়া হলের সহ-সভাপতি, হাসিবুল হাসান হাসিব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, জুয়েনা আলম মুন কুয়েত মৈত্রী হলের অর্থ সম্পাদক, জেবা সায়ীমা বিজ্ঞান উপ-সম্পাদক, মেহেরুন্নিসা মিম নাট্য ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক এবং মনিরা তিশা আইন সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক আমরিন জান্নাত তাইরু, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম হৃদয়, মেহেদী হাসান কার্যনির্বাহী সদস্য, জসীমউদ্দিন হল ছাত্রলীগের মো. রাফিউল ইসলাম রাফি বিজয় একাত্তর হল শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা উপ-সম্পাদক শাহ সাকিব সাদমান প্রান্ত, শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের উপ-পাঠাগার সম্পাদক ইসরাত জাহান সুমনা, সার্জেন্ট জহরুল হক হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ওয়াসিক, আইন অনুষদ শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আশিকুর রহমান ওরফে জিম এবং রাসেল হোসেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখার গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক মাছুম শাহরিয়ার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখার মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক উপ-সম্পাদক রাতুল আহামেদ ওরফে শ্রাবণ, কলাভবন ছাত্রলীগের ১নং সহ সম্পাদক মো. মুহাইমিনুল ইসলাম।

জাহাঙ্গীরনগর শাখা ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী। পদত্যাগ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মী।

রিপনুল ইসলাম রবিন, শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আফরিন আলম রিমি, শেখ রাসেল হল শাখা ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ সামি, খাদিজা জুই, সিদরাতুল মুনতাহা, শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ইমরান আহমেদ, নিয়ামুল আরফসহ অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মীরা।

জবি :
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগ থেকে এখন পর্যন্ত এমন ৬ জনের নাম পাওয়া গেছে। পদত্যাগ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মী।

সামাজিকমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করা এসব নেতা হলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান সামি ও রসায়ন বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি তাওসিফ কবির, মনোবিজ্ঞান বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি রনি সরকার ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আশিকুর রহমান এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান নোমান এবং শিঞ্জন বসাক।

কুবি :
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগ থেকে এখন পর্যন্ত এমন ৫০ জন শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে। পদত্যাগ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মী।

পদত্যাগ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সহ সভাপতি জান্নাতুল মাওয়া বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোকেয়া হল সহ সভাপতি পদ থেকে মুক্তি নিলাম, পদত্যাগ ঘোষণা করেছি, যেহেতু রাজাকার বলে আখ্যায়িত করেছেন, রাজাকার হয়েই থাকতে চাই।

বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হাসিবুল হাসান হাসিব লেখেন, আমি হাসিবুল হাসান হাসিব সহ সভাপতি বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রলীগের সঙ্গে আমার পূর্বের সব সম্পর্ক ত্যাগ করলাম, আমার ছোট ভাই বন্ধুদের অনেককে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। ঘৃণা হচ্ছে ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে এতদিন কাজ করায়, বিদায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

এদিকে, কোটা সংস্কারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর করা বক্তব্যের প্রতিবাদে রোববার রাত ১১টার দিকে বিক্ষোভে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। এসময় বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এসে কোটা সংস্কারের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পরে গতকাল সোমবার বিক্ষোভ কর্মসূচির একপর্যায়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত তিন শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন।

প্রসঙ্গত, রোববার (১৪ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? এই বক্তব্যের প্রতিবাদেই সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বের হন।

 

 

টিআই/ এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *