সকাল ৯:০৭ | বৃহস্পতিবার | ১লা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২রা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে জানুয়ারির প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

 

 

উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে জানুয়ারির প্রথমার্ধে লন্ডনে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন একথা জানান।

তিনি বলেন, মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে ইনশাআল্লাহ জানুয়ারির প্রথমার্ধে উনাকে ইউকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। যদিও উনার সঠিক তারিখ এখন পর্যন্ত নির্ধারিত হয় নাই। যথা সময়ে সেটি (নির্ধারিত তারিখ) আপনাদেরকে জানিয়ে দেয়া হবে।

অধ্যাপক জাহিদ জানান, মেডিকেলের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি বিমানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী লন্ডন যাবেন। তার সাথে চিকিৎসকের একটি টিম, পরিবারের কয়েকজন সদস্য এবং চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তারাও যাবেন।

এদিকে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আবদুস সাত্তার আজ বুধবার দুপুরে গণমাধ্যমকে জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন উন্নত চিকিৎসার জন্য আগামী ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এসময় তার সফরসঙ্গী হবেন চিকিৎসক, নার্স ও ব্যক্তিগত সহকারীসহ ১৫ জনের একটি দল। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার দিন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ৭ জানুয়ারি ঘিরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, খালেদা জিয়া প্রথমে লন্ডনে যাবেন তার ছেলে তারেক রহমানের কাছে। সেখানে কয়েকদিন অবস্থানের পর যুক্তরাষ্ট্র যাবেন লিভার জটিলতার চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে পূর্ব বাল্ডিমোরে বিশ্বখ্যাত জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালে বিএনপি চেয়ারপার্সনের চিকিৎসার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশের ভিসাও নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।

২০২৩ সালের আগস্ট মাসে এই হাসপাতালের তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রফেসর ক্রিসটোস স্যাভাস জর্জিয়াডস, প্রফেসর জেমস পিটার অ্যাডাম হ্যামিলটন ও প্রফেসর আবদুল হামিদ আহমেদ আব্দুর রব ঢাকা এসে এভারকেয়ার হাসপাতালে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেন। তারা বিএনপি চেয়ারপার্সনের লিভারের রক্তনালীতে সফল অস্ত্রোপচার করেন।

৭৯ বছর বয়েসী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস ছাড়াও দীর্ঘদিন যাবত নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের নানা জটিলতা রয়েছে তার। ২০০২ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তার হৃদযন্ত্রের তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়।

খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে ইতিমধ্যে অন্তত ১৫ জনের একটি তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই তিনি লন্ডন গিয়েছিলেন। এরপর একাধিক মামলার পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ওই বছরের ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া। ওই সময় তিনি যুক্তরাজ্যের ডা. হ্যাডলি ব্যারির চিকিৎসা গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তখন দুই বছরের বেশি সময় তিনি কারাবন্দী ছিলেন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়। এরপর ছয় মাস পরপর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছিল সরকার। অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বহুবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। দিনের পর দিন তাকে হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে। আওয়ামী সরকার তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। পরে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তার অস্ত্রোপচার দেশেই করা হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়।

জানা গেছে, গত আগস্টের শুরুতে নবায়নকৃত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) খালেদা জিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর নভেম্বরে তিনি যুক্তরাজ্যের ভিসার কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ছাড়াও সৌদি আরবের ভিসা পেয়েছেন বেগম জিয়া। চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার সময় সৌদি থেকে ওমরাহ করতে পারেন তিনি।

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *