রাত ৩:২৬ | বৃহস্পতিবার | ১লা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২রা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের দ্রুত বিচারের দাবি বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ আগস্ট ২০২৪

 

ছাত্র জনতার যৌক্তিক আন্দোলনে গণ হত্যার দায়ে পলায়নকারী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচারের দাবিতে রাজধানীসহ সারদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাজধানীতে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইট, আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন স্পটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে ঢাকা মহানগর বিএনপি, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।  আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। এটি চলে রাত অবধি। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

দেশবাসীকে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু বলেন, গণতন্ত্র উত্তরণের চলমান প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে সারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তার মধ্যে ঢাকা মহানগর অত্যন্ত স্পর্শকাতর অবস্থায় রয়েছে। গতকাল রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। প্রশাসনকে শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করার অনুরোধ জানিয়ে মজনু বলেন, প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকে সবার আগে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের এই নৈরাজ্যের কাছে আমরা হার মানতে পারি না। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান নির্বিশেষে বন্ধু ও পাড়া প্রতিবেশীদের রক্ষায় বিএনপির নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে এই নেতা বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের একটাই পরিচয়, আমরা বাংলাদেশি।
পুলিশ জনগণের শত্রু নয় মন্তব্য করে মজনু বলেন, একটি সভ্য এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুলিশ অপরিহার্য। কিন্তু স্বৈরাচার শেখ হাসিনা বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের শত্রু হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। তিনি বলেন, হাসিনা পালানোর পর বর্তমানে সুকৌশলে একটি চক্র পুলিশের মনোবল ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। পুলিশকে অকার্যকর করে দেওয়া গেলে দেশকে অস্থিতিশীল করা সহজ। ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মনে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা সহজ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব, যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন অর রশীদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক প্রমুখ।
বাংলাদেশ থেকে কোনো সরকারপ্রধান নির্লজ্জের মতো নেতাকর্মীদের রেখে পালিয়ে যায়নি উল্লেখ করে জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেছেন, পালিয়ে গিয়ে শেখ হাসিনা রাজনীতিতে নিকৃষ্টতম ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার মিরপুরে শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নয়ন বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী সরকার নিজেদের অভিশপ্ত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল। শুধু আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা ছিল জালিম আর সবাই ছিল মজলুম। ক্ষমতার অপপ্রয়োগ, অধিকার হরণ, জুলুম, নির্যাতন, গুম, খুন এমনকি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেওয়াসহ হেন কোনো কাজ নেই, যা তারা করেনি। এই ভয়ংকর সরকার তার পুলিশ বাহিনীকে তৈরি করেছিল গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য।
এসময় যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করিম পল বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে অস্ত্র দিয়েও ক্ষমতায় টিকতে না পেরে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। নেতাকর্মীদের কথা চিন্তা না করে তিনি ভারতে পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকে কর্মীদের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির উসকানি দিচ্ছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সদস্য সচিব সাজ্জাদুল মিরাজের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ মিছিলে আর উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জুয়েল, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, ফিরোজ আব্দুল্লাহ, শাহ নাসির উদ্দিন রুমন, গিয়াস উদ্দিন মামুন, ইউনুস আলী রবি, সাজিদ হাসান বাবু, রোকনুজ্জামান, মিজানুর রহমান রাজ, মিজানুর রহমান সুমন, শাহজাহান রনি প্রমুখ।
শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচারের দাবিতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইট, আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা মহানগর বিএনপি, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে অবস্থান নিয়েছে ছাত্রদল। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের নেতৃত্বে সংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী অবস্থান নিয়ে শেখ হাসিনার বিচার দাবি জানিয়ে শ্লোগান দেয়। তাদের হাতে জাতীয় পতাকা এবং বিএনপির পতাকা ছিল। এ ছাড়া মালিবাগ, মৌচাক, শাহজাহানপুর, কাপ্তানবাজার প্রভৃতি সড়কে বিএনপি, মহানগর যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা মিছিল করেছেন।
বেলা একটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, ছাত্রদলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন। শহীদ মিনারের এই কর্মসূচিতে, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, ঢাকা কলেজ, তেজগাঁও কলেজে, কবি নজরুল কলেজ, বাংলা কলেজে, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেছা কলেজে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতাকর্মীরাও অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম শহীদ মিনারে অবস্থানকালে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সপ্তাহব্যাপী যে কর্মসূচি রয়েছে, সেই কর্মসূচির সমর্থনে তারা শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছে। বিগত সময়ের মতোই তাদের সঙ্গে আমরা রয়েছি। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চলা আন্দোলন কর্মসূচিতে যেসব ছাত্রজনতা শহীদ হয়েছেন, তাদের সঠিক বিচারের দাবিতে ও বিগত ১৫ বছরে ছাত্রদলের যেসব নেতাকর্মী গুম ও খুন হয়েছেন, এসব গুমখুনের বিচারের দাবিতে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছি।
সাধারণত বিএনপি ও এর অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের যেকোন কর্মসূচিতে কয়েক দিন আগেও বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যের অবস্থান দেখা গেলেও গতকাল শহীদ মিনার ও এর আশপাশের এলাকায় পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তৃতা, কবিতা আবৃতি ও প্রতিবাদী গান পরিবেশন করা হয়।
ছাত্রদল নেতারা তাদের বক্তব্যে বলেন, গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। খুনি, স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্টদের জায়গা আর এই দেশে হবে না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ট্রাইব্যুনাল দ্রুত গণহত্যার বিচার শুরু করতে হবে। হাসিনা ও তার দোসরদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি জহির উদ্দিন, ইজ্জাজুল কবির, মঞ্জুরুল রিয়াদ, রিয়াদ রহমান, এইচ এম আবু জাফর, শাকির আহমেদ, সোহেল রানা, ঢাকা মহানগর দক্ষিনের আহ্বায়ক পাভেল সিকদার, সদস্যসচিব নিয়াজ মাহমুদ, ঢাকা মহানগর পূর্বের আহ্বায়ক শেখ খালিদ হাসান, সদস্যসচিব আল-আমিন হোসাইন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতির মেহেদি হাসান, সাধারণ সম্পাদক রাসেল বাবু এবং ঢাকা মহানগরের পশ্চিমের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *