রাত ৯:৪৮ | বুধবার | ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ১লা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

অপকর্ম থামছেই না জিল্লুর বাহিনীর : এবার খুনের মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদর ফাঁসানোর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৭ সেপ্টম্বর ২০২৪

 

 

খুন, চাঁদাবাজিসহ দখলের মতো অপরাধ করেই চলেছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর-বছিলা এলাকার ত্রাস খোন্দকার জিল্লুর রহমান ও তার সহযোগিরা। গত ২৯ আগস্ট তাদের অপকর্ম নিয়ে নিউজগেট২৪ডটকম এ একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের আগে যেভাবে এলাকায় ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করেছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনেও পরও এই এলাকায় তারা অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে। জমি দখলে জড়িত জিল্লুর এবার তার বাহিনী দিয়ে খুন করার পর এখন মামলায় প্রতিপক্ষ করা হচ্ছে বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের। তার চলমান অপকর্ম চালিয়ে যেতে বিরোধীদের ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বিএনপির নেতারা বলছেন, যারাই অপকর্ম করবেন তাদের আইনের কাছে সোপর্দ করা হবে।

এলাকাবাসী জানান, খোন্দকার জিল্লুর রহমানের রয়েছে কিশোর গ্যাং ও নিজস্ব পেটোয়া বাহিনী। খুন, চাঁদাবাজি থেকে জমি দখল এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তার বাহিনী করছে না। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি বাহাউদ্দিন নাছিমের ‘ডান হাত’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই জিল্লুর কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করতো না। সরকারের প্রভাব দেখিয়ে বারবার পার পেয়ে গেছেন। থানায় তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করারও সাহস পেতনা।

জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরই ভোল পাল্টান জিল্লুর। এখন নিজেকে জাতীয়তাবাদী আদর্শের বলে প্রচার করছেন। অথচ জমি দখলে বাহিনী লেলিয়ে খুন করার পর এখন মামলায় প্রতিপক্ষ হিসেবে খোদ বিএনপি নেতাকর্মীকেই ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গিরগিটির মতো রং বদলাতে ওস্তাদ জিল্লুর। আর্থিক সুবিধার মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের হাত করে বাহিনীর মাধ্যমে তিনি জারি রাখেন ত্রাসের রাজত্ব। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে জিল্লুর বাহিনীর লোকজন বিল্লাল গাজীকে (২৮) নৃশংসভাবে খুন করে। কুপিয়ে হত্যার পর তার শরীর থেকে হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করা হয়। জিল্লুর বাহিনীর সদস্য সন্ত্রাসী মিজান, সালমান, শুক্কুর, আমিরসহ চিহ্নিতরা এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় বলে। স্থানীয়রা জানান।

এ ঘটনায় ওই দিন রাতে নিহতের মা রফিকা বেগম মোহাম্মদপুর থানায় ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এক নম্বর আসামি করা হয় ইদ্রিস মিয়াকে (প্রকৃত নাম হাফিজ মোহম্মদ ইদ্রিস), যিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টুর আত্মীয়। আওয়ামী লীগের রোষানলে ইদ্রিসের এক ভাই দীর্ঘ ১৭ বছর কারাবন্দি।

তবে মামলার বাদী রফিকা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, কাগজে যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা আমার ছেলে হত্যার সঙ্গে জড়িত নন। খুনিদের বাদ দিয়ে হাউজিং কোম্পানির লোকজন বিল্লালকে তাদের কর্মচারী উল্লেখ করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়েছে। আসামিদের সম্পর্কে কিছুই জানি না। হত্যাকারী এবং সেখানে উপস্থিত আমিরসহ অন্যদের আসামি করা হয়নি বলে জানান তিনি।

সূত্র জানায়, মামলা করার সময় জিল্লুর রহমান থানায় উপস্থিত হয়ে প্রভাব খাটান। বাদী ও নিহতের স্বজনদের থানা থেকে কৌশলে অন্যত্র সরিয়ে প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করেন।
বিল্লাল গাজীর বোন জামাই বিপু মিজি বলেন, মামলার সময় লোকের মাধ্যমে আমাদের অন্যত্র নিয়ে যান জিল্লুর রহমান। পরে দেখেছি, তিনি পছন্দমতো আসামি করেছেন। হত্যাকারীদের নাম বাদ দিয়েছেন। আমরা এটি প্রত্যাহার করে আসল খুনিদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

জানা যায়, জাতীয়তাবাদী সমবায় দল নামে ভুঁইফোড় সংগঠনের সভাপতি বলে পরিচয় দেন জিল্লুর রহমান। মূলত ইদ্রিসের ‘গ্রাম বাংলা হাউজিং প্রকল্প’ দখলে নিতে ত্রাস সৃষ্টি করছেন তিনি। গত ২২ আগস্ট সাভার থানায় জিল্লুর ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগে জিডি করে গ্রাম বাংলা হাউজিং কর্তৃপক্ষ। এর পর ২৯ আগস্ট ঢাকা উদ্যানের ট্রলার ঘাটে বাহিনীর মাধ্যমে মুহুর্মুহু ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেন জিল্লুর।

গ্রাম বাংলা হাউজিংয়ের পরিচালক হাফিজ মোহম্মদ ইদ্রিস বলেন, জিল্লুর এতদিন আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় নানা অপকর্ম করেছেন। এখন বিএনপি নেতা সেজে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ‘আকাশ নীলা হাউজিং’ নামে কাগজপত্র তৈরি করে আমাদের প্রতিষ্ঠান দখলের চেষ্টা করছেন। এ ধারাবাহিকতায় আমাকে ও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীর নামে হত্যা মামলা দিয়েছেন। ককটেল বিস্ফোরণ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর ও অস্ত্রের মহড়া দিয়ে তারা আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে জিল্লুর রহমানের গ্রামীনফোনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ হয়নি। এছাড়া পরিচয় দিয়ে এসএমএসও পাঠানো হয়েছে। তিনি সাড়া দেননি।

জিল্লুর বাহিনীর বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক জানান, এমন ঘটনা তিনিও শুনেছেন। তবে এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী সমবায় দল নামে বিএনপির কোনো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন নেই। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ অপকর্ম করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, খোন্দকার জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে অনেকেই অবিযোগ করছেন। আমরা বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়েছি। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

জা ই / এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *